১৯৮৯ সালে লন্ডনের এলবার্ট কলেজে থেকে হার্ট সার্জারীতে গোল্ড মেডেল পেয়ে দুইজন ডাক্তার নিজ নিজ দেশে ফেরৎ যান। এদেরই একজন ডা. দেবী শেঠি। কোলকাতাতে ফিরে কাজ শুরু করে পরে নিজের এলাকাতে চলে যান।
১৯৯৭ সালে বাবাকে নিয়ে তার হাসপাতালে এক মাস থেকেছি। তখন দেখেছি একজন ডাক্তার কেবল কথা বলে কেমন করে রোগীকে আপন করে নেন।
তিনি একজন সার্জন। এমনিতে স্টেথো ঝুলিয়ে রোগীকে নিজের হাতে দেখার কোন কারণ নেই। উনি দেখার আগেই প্রায় সব টেস্টের রেজাল্ট, ভিডিও তার কাছে থাকে। উনি একজ্যাক্টলি জানেন তার রোগীর কী লাগবে।
তারপরও তিনি বাবাকে দেখলেন। কাগজের প্যাডে হার্টের ছবি একে দেখালেন কোথায় সমস্যা। বাবা বললেন ওষুধ খেলে সারবে কী না?
বললেন- ওষুধ খেলে সারবে না। অপারেশন করতে হবে। বললেন আপনি মন স্থির করে আসুন।
আমাকে বললেন - বাবাকে নিয়ে ক'দিন এখানে থাকুন। তারপর আবার দেখবো।
বলে নিজের আসন থেকে উঠে আসলেন। নিজেই বাবাকে হাত ধরে চেয়ার থেকে তুললেন। এবং নিজের হাতে চেম্বারের দরজা খুলে দিলেন।
সো সিম্পল!
বাইপা সার্জারির পর বাবাকে নিযে ফিরে আসি। বছর দেড়েক পরে বাবা একদিন ফোন করে জানালেন তিনি দেখেছেন ডা. শেঠি ঢাকায় আসবেন। আমি যেন একটা এপয়েন্টমেন্টের চেষ্টা করি। কিন্তু ততোদিনে ওনার সব এপয়েন্টমেন্ট শেষ। বাবা শুনলেন না। ঢাকায় আসলেন। বললেন, আমি যেন তাকে নিযে যায়। গাড়ি থেকে নেমে হাসপাতালে ঢোকার মুখে এমন কোন জায়গায় দাড়াতে যেন ডা. বাবাকে দেখতে পান।
তো, বাবার পাগলামিতে আমি সায় দিলাম। আমি আর বাবা দাড়ায় আছি সেন্ট্রাল হাসপাতালের সামনে। গাড়ি থেকে নেমে বের হয়ে একটু ঘুরতেই বাবাকে দেখলেন ড. শেঠি। এবা সবাকে (আমাকে সহ) অবাক করে দিযে বাবার দিকে আগায় আসলেন ও হাত বাড়িয়ে দিলেন - হাও আর ইয়ু মি. হক?
ত্রস্থ আয়োজক ভলান্টিয়ার দ্রুত রশি সরিয়ে নিয়ে দেবি শেঠিকে বাবার কাছে আসতে দিলেন। ডা বাবার হাত ধরে রাখলেন এবং বাবাকে নিয়েই হাসপাতালে ঢুকলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- কাম অন ইয়াং ম্যান!
অন্য রোগীদের দেখার আগে বাবাকে দেখলেন। আমার কাছে রাখা বাবার ফাইল দেখলেন। তারপর বললেন - ইয়ু আর ফাইন, মি হক।
আমাকে বললেন - বাবাকে নিয়ে ব্যাঙ্গালোরে যেতে হবে না। হি ইজ ফাইন। তারপর আয়োজকদের বললেন উনি যদি আসেন আবার তাহলে যেন আমাকে খবর দেওয়া হয়।
তারপর যথারীতি নিজের চেযার ছেড়ে উঠলেন। বাবাকে চেয়ার থেকে উঠালেন এবং নিজেই চেম্বারের দরজা খুলে দিলেন!!!
ব্যাঙ্গালোরে এবং ম্যাঙ্গালোরে নিজের শহরে ২২ বছর আগে শেঠীকে দেখতাম কেডস, জিনস পড়ে হাসপাতালে আসতেন! এবং রাস্তায় বা লবিতে অনেকের সঙ্গেই আলাপ করতেন। যে ক'দিন আমার সঙ্গে দেখা হয়েছে সব ক'দিনই তিনি আমাকে সন অব মি. হক হিসাবে আইডেন্টিফাই করেছেন!!!
১৯৮৯ সালে দ্বিতীয় যে ডাক্তারটি গোল্ড মেডেল নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন তার নাম আমার নেটওয়ার্কের কেউ বলতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। ভদ্রমহিলা মোটেই কথা বলেন না। গেলে মাত্র একটা ইসিজি করেন নিজে। তেমন কিছু বলেন না। চাচীকে নিয়ে ঐ ডাক্তারের কাছেও আমার যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। এবং বের হওয়ার পর মনে হতো একই সোনার পদক পাওয়া দুজনের অবস্থা দুরকম।
একজন হয়েছেন "মনুষ্যরূপী দেবতা" আর একজন না হয় নাই বললাম।
আজ সকাল থেকে বাবার কথা অনেক মনে পড়েছে। বাবা যতোদিন বেঁচে ছিলেন সবসময় শেঠির কথা বলতেন। কেমন কের ডা. নিজে উঠে এসে রোগীকে দরজা খুলে দেন, এগিয়ে দেন।
সো সিম্পল।
এন্ড গ্রেট
No comments:
Post a Comment