ইমোশনাল মার্কেটিং- ২ : লাইক এ গার্ল
আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন পাড়ার কিছু কিছু বড় ভাই আমাকে খেপাতেন। তারা আমার একটা নামও দিয়েছিলেন। কিন্তু, সেটাতে আমি যতো না খেপতাম তার চেয়ে বেশি মন খারাপ হতো যখন কোন কিছুতে আমার অক্ষমতাকে কেউ কেউ বলতো -ও তো, ‘মেয়েদের মতো’! । এখন অবশ্য আমি অনেক কাজে মেয়েদের মতোই হতে চাই! কিন্তু, তখন এ কথাতে দু:খ পেতাম।
পরে জেনেছি ‘মেয়েদের মতো’ এই শব্দযুগল কেবল এ দেশে নয়, অন্য অনেক দেশেও খুব একটা ভাল শব্দবন্ধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় না। “লাইক এ গার্ল” আসলে মেয়েদের জন্য অপমানজনক একটি শব্দ। ফলে, অনেক মেয়েও “লাইক এ গার্ল” হতে চাইতো না। কারণ মনে করা হয় এতে তাকে পচানো হচ্ছে। আর ঠিক এ কথাটা মাথায় রেখে অলওয়েজ ব্র্যান্ড ২০১৪ সালে তাদের #LikeAGirl ক্যাম্পেইনের পরিকল্পনা করে।
অলওয়েজ ব্র্যান্ডটা আমাদের দেশে খুব একটা পরিচিত নয়। এটি প্রোক্টর এন্ড গ্যাম্বলের মেয়েদের পণ্যের একটি ব্র্যান্ড। মেয়েদের প্যাড, ওয়াইপ এসবের ব্যান্ড, প্রায় ৩৫ বছরের পুরাতন।অলওয়েজের একটি সিস্টার কনসার্ন আছে। তাদের একটি প্রোডাক্ট হচ্ছে হুইসপার। এটি মেয়েদের স্যানিটারি প্যাড। এটি বাংলাদেশের সব জেলাতে পাওয়া যায়।
২০১৪ সালে তাদের এই ক্যাম্পেইন এর মূল উদ্দেশ্য ছিল মেয়েদের মত বা লাইক এ গার্ল এ কথাটার মানে পাল্টে দেওয়া। একজন লোক “মেয়ের মতো” এটি আসলে মেয়েদেরকে অপমান করা কারণ এতে ধরে নেওয়া হয় যে, মেয়েরা অনেক কাজই পারে না। এ কারণে অনেক মেয়েও লাইক এ গার্ল কথাটা সহজে নিতে পারে না। ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য ছিল এটা শুনলে একটা মেয়ে যেন বিরক্ত নাহয়ে গর্ব বোধ করতে পারে সে ব্যাপারটিকে সামনে আনা।
এই ক্যাম্পেইনটা একটি অপমানের ব্যাপারকে একটি পজিটিভ আন্দোলনে রূপ দেয়। ব্যবসার বৃদ্ধিও ছিল ঈর্ষাজনক। শুধু তাই নয় ক্যাম্পেইনটি একই বছরে বিজ্ঞাপন জগতের এমি এওয়ার্ড, ক্যানেস গ্রা প্রি এওয়ার্ড ও গ্র্যান্ড সিলো এওয়ার্ড লাভ করে। একই বছরে এই তিন পুরস্কার পাওয়াটা একটি বিরল ও দুর্লভ ঘটনা। ইমোশনাল মার্কেটিং কি করতে পারে তার একটি ছোট্ট উদহারণ হচ্ছে এই লাইক এ গার্ল ক্যাম্পেইন।
আমাদের দেশের মতো সারা পৃথিবীতে এখন বেশিরভাগ ক্রেতাই কিন্তু “ওয়েল ইনফর্মড”। বলতে গেলে তারা বিজ্ঞাপনেই ডুবে থাকে। রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেট, স্যোসাল মিডিয়া- সবটাতেই তাদের আকৃষ্ট করার নানান আয়োজন। তার ওপর পত্রিকা ম্যাগাজিনতো আছেই। আমাদের প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের মতো পত্রিকাতো এখন আলাদা কাভারই ছাপিয়ে দেয় বিজ্ঞাপনের। ফেসবুক সারাক্ষণই বিজ্ঞাপন দেখায়। শুধু কি বিজ্ঞাপন। এখন সার্চ ইঞ্জিন সবার হাতের মুঠোয়। বিশ্বের অর্ধেক লোকই এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে। কেউ কিছু জানতে চাইলে আগে গুগল করে। ফলে, তথ্যে সে থাকে ভারাক্রান্ত। এই যে এত বিজ্ঞাপন, এতো যে বিপণনের চেষ্টা এই সময়ের ভিতর দিয়ে কীভাবে একটি কোম্পানি দাঁড়িয়ে থাকবে, কিভাবে এই মার্কেটিং ওয়ার্ল্ডে তার কতৃর্ত্ব প্রতিষ্ঠা করবে?
কাজেই সেখানে সব নিত্য-নতুন বিষয় আমাদের ভাবতে হবে।সহজ বুদ্ধি হলো একটা মেজর কম্পোনেন্ট হিসাবে আবেগটাকে ব্যবহার করা। কারণ মানুষ অনেকখানি আবেগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ইমোশনাল মার্কেটিং এ আমাদের দেশের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় উদাহরণ সম্ভবত হালাল সাবান। এ্যারোমেটিক এর হালাল সাবানের বিজ্ঞাপনটিকে নিয়ে আমরা বিস্তারিত কেস স্টাডি দেখব। কিন্তু তারও আগে আসলে আমাদের জেনে নেয়া উচিত ইমোশনাল মার্কেটিং কী?
ইমোশনাল মার্কেটিং হল এমন একটা মার্কেটিং এবং এডাভার্টাইজিং যেটা আসলে মানুষের ইমোশনকে কাজে লাগায়। উদ্দিষ্ট জনগোষ্টীর চোখে পড়া, মনে রাখার ব্যবস্থা করা, শেয়ারে উদ্বুদ্ধ করা এবং সবশেষ তার থেকে গাঁটের টাকা খসিয়ে পণ্য বা সেবা গছিয়ে দেওয়ার বুদ্ধি। একটি সাধারণ প্রথা হলো একবারে একটির বেশি আবেগকে ব্যবহার না করা। মানে সুখ, দু:খ, রাগ কিংবা ভয়ের যেকেন একটাকে একবারে কাজ লাগানো।
ইমোশনাল মার্কেটিং কেন ইফেক্টিভ এবং সেটাকে কিভাবে তোমার মার্কেটিং প্লান এর সঙ্গে যুক্ত করব সেটাই হবে আমাদের বকর বকরের উদ্দেশ্য।
তবে সবকিছুর আগে আমাদের আসলে আবেগের ব্যাপারটা বোঝা দরকার।
Original Link
Pingback: ইমোশনাল মার্কেটিং-১: হালাল সাবানের মাজেজা
পরের পর্ব – ইমোশনাল মার্কেটিং-৩ : আবেগের আমি , আবেগের তুমি, আবেগ দিয়ে যায় চেনা
No comments:
Post a Comment