লেখক আনিসুল হক, উপন্যাস লেখার জন্য আলোচিত হলেও টেলিভিশনের জন্য নাটক আর রম্য লেখার জন্য বেশ পাঠক প্রিয়। অনলাইন-অফলাইন সবক্ষেত্রেই তার লেখার পাশাপাশি দারুণ সব কাজের কথা ফেসবুক আর পত্রিকা থেকে জানা যায়। যে তরুণরা কোন উদ্যোগ নিয়ে দৌড়াদুড়ি করছেন, কিংবা কোন পণ্য-সেবা নিয়ে সামনে কিছু করার চেষ্টা করছেন-করবেন তারা আনিসুল হকের কাছ থেকে দারুণ কিছু বিষয় শিখতে পারেন। লেখক আনিসুল হক থেকে তরুন উদ্যোক্তারা দারুণ সব বিষয় জানতে পারেন। তা নিয়েই এই পোস্ট।
কি-এর বদলে কেন বোঝার চেষ্টা করুন।
আনিসুল হকের উপন্যাস বা লেখার ধরন প্রচলিত প্রেম কিংবা রোমান্টিক সাহিত্যের সঙ্গে মেলানো ঠিক হবে না। কোন কোন বই পাঠকের দায়ে প্রেম-ভালোবাসা কেন্দ্রিক হলেও আনিসুল হকের মা উপন্যাসের কারণে লেখার একটা ভিন্ন স্টাইল লক্ষ্য করা যায়। কোন বাস্তব ঘটনার মধ্যে আপনাকে উপন্যাসের আঙ্গিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা আনিসুল হকের আছে। কি লিখছেন, তার চেয়ে কেন লিখছেন সেটাই কিন্তু একটু গভীরে বোঝা যায়। তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে কেউ যখন কোন কিছু নিয়ে কাজ করেন, তিনি আসলে খুব কম ক্ষেত্রেই কেন কাজ করছেন তা ভাবেন না, কি নিয়েই থাকেন। বিষয়টা আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, স্টিভ জবসের বিখ্যাত একটা লাইন ছিল, ‘মেক অ্যা ডেন্ট ইন দ্য ইউনিভার্স’, মানে মহাবিশ্বে রঙ চড়াও, আসলেই কি তাই? স্টিভ জবস কি নিয়ে কাজ করেছেন, কম্পিউটার ও প্রযুক্তির জিনিষপত্র নিয়ে। স্টিভের বায়োগ্রাফি পড়ে যা জানবেন তা হলো, কোন একটা সুপ্রিম লক্ষ্য নিয়ে জীবনদর্শন তৈরি করে জীবনে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। এই সুপ্রিম লক্ষ্যই হচ্ছে “কেন”। আপনি কেন নতুন কোন কাজ করবেন, কিংবা আপনার পন্য বা সেবা মানুষ কেন কিনবে তা আগে বুঝুন। স্টারবাকস কিন্তু কফি বেচে না, এক্সপেরিয়েন্স।
আমি সাইমন সিনেকের একটি বই পড়ছি এখন স্টার্ট উইথ হোয়াই। আমরা যাই করি না কেন তার মধ্যে হোয়াই না থাকলে তা বেশি দিন চালানো কঠিন কিন্তু। স্টিভ জবস, বিল গেটস-সবার জীবনে একটা হোয়াই ছিল, সেই হোয়াই দিয়েই তারা অ্যাপল-মাইক্রোসফট তৈরি করেছেন। তারা সরে যাওয়ার পরে সেই হোয়াই কিন্তু কোম্পানি থেকে সরে যায়, এতেই কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অ্যাপল-মাইক্রোসফটের মানবীয় দিকটা দুর্বল হয়ে যায়। হোয়াই দিয়েই মানুষ সামনে এগিয়ে যায়, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানও। এই হোয়াই আপনার সাফল্যের পথ ঠিক করে দেয়, আর টাকা কিংবা গাড়ি হচ্ছে সেই সাফল্যের ইয়ার্ডস্টিক।
সামাজিকতাকে নিয়ন্ত্রণ করুন।
স্যোশাল মিডিয়াতে তরুণ উদ্যোক্তাদের শুরুর দিকে বেশ ফ্যান তৈরির প্রবনতা থাকে। লেখক আনিসুল হক ফেসবুকে যে কম জনপ্রিয় নন তা তার ফেসবুক পেইজ অনুসরণ করলেই টের পাবেন। আনিসুল হক কিন্তু যেমন ফেসবুকে সামাজিকতা ধরে রেখেছেন, তেমনি কিন্তু প্রথম আলোতে রম্য লেখা কিংবা বই মেলার জন্য বই লিখে যাচ্ছেন। নিজেকে ফেসবুকের প্রবল জনপ্রিয়তায় অনেক উদ্যোগ হারিয়ে যাওয়ার নমুনা আপনার আশপাশেই পাবেন। নিজের সামাজিকতাকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখুন।
ভবিষ্যৎ কাস্টমার কারা তাদের কথা ভাবুন।
ব্যবসা শুরুর পরে অদৃষ্টের দিকে যারা তাকিয়ে থাকেন তারা কপি-মি টাইপের ব্যবসাই করে যান। প্রজন্মের পরে প্রজন্মে সেই ব্যবসার আদর্শকে ছড়াতে পারেন না। আপনি যদি শুধু বর্তমানের কাস্টমার নিয়ে ভাবেন, তাহলে অনেকক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতায় টিকবেন না। আনিসুল হক লেখক, উনি বই লিখেন মোটামুটি বিশ বছরের বেশি তরুণ-তরুণীদের জন্য। গেল কয়েক বছর ধরে আনিসুল হক কিন্তু কিশোর ম্যাগজিন কিশোর আলোর সম্পাদক। আজকে যে কিশোরের বয়স ১৩ কিংবা ১৬, সে কিন্তু আগামী কয়েক বছর পরেই কিশোর আলোর রেফারেন্সে আনিসুল হকের বই পড়বেন।
রিয়েল নেটওয়ার্কিং শিখুন
উদ্যোক্তা হতে চাই যারা আমরা তারা নানান সময় নানান ইভেন্টে অংশ নিতে ছুটে যাই। ইভেন্ট কি উচ্চশিক্ষা, কি বিগ ডাটা-সবক্ষেত্রেই ছুটে যাই আমরা। এটা কিন্তু সত্যিকারের নেটওয়ার্ক পাওয়ারে সহযোগিতা করে না। লেখক আনিসুল হক কিন্তু গণিত অলিম্পিয়াড বা ভাষা প্রতিযোগ ঘরণার নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানগুলোকে নিজের নেটওয়ার্কিং টুলস হিসেবে ব্যবহার করেন। একটা অনুষ্ঠানে ১০০০ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে কিছু বলে বোঝানোর চেয়ে ১০০ কিশোর-কিশোরীর সামনে মিনিট দুয়েক কিছু বলে আসার প্রভাব থাকে অনেক দিনের।
জনপ্রিয়তা নিয়ন্ত্রণ করা শিখুন।
সাংবাদিকতা কিংবা লেখালেখির জন্য জনপ্রিয়তার ইতিবাচক-নেতিবাচক মাপকাঠিতে আনিসুল হক অনেক সামনে। ফেসবুকে নানান ট্রল কিংবা লেখা নিয়ে সমালোচনা তো আছেই তার নামে। কোন কিছুতেই কিন্তু থেমে নেই আনিসুল হক। যখন আমরা কোন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করি, টেলিভিশন-পত্র-পত্রিকায় নানান ফিচার প্রকাশিত হয়। সেই ফিচারের শেয়ারের বন্যায় বেশির ভাগ উদ্ভাবনী উদ্যোগই হারিয়ে যায়। জনপ্রিয়তার টুলসগুলোকে যারা সঠিকভাবে ব্যবহার করেন তারাই টেকেন কিন্তু।
নিজেকে একটু একটু করে সামনে নিতে হয়।
দারুণ কিছু একটা করেই বেশির ভাগ “ভাড়” উদ্যোক্তারা সেই মাপের মিডিয়া কাভারেজ খোঁজা শুরু করেন আমাদের দেশে। আমাদের যারা কিছু করার চেষ্টা করেন তারা ব্র্যান্ড স্টোরি ডেভলপ না করে সামনে এগিয়ে যেতে চান। আনিসুল হক বুয়েটে আশির দশকে পড়াশোনা করেন, এরপরে সাংবাদিকতায় আসেন। এরই মধ্যে লেখালেখি চলছে তার। এক দিনেই আজকের আনিসুল হক হতে পারেন নি তিনি। একটু একটু করে সামনে এগোতে হয়।
Link:
-- Stay cool. Embrace weird.
No comments:
Post a Comment