গ্রোথ হ্যাকার মার্কেটিং – টু বি অর নট টু বি
আমরা অনেকেই হটমেইলের কথা ভুলে গেছি। যদিও ১৯৯৬ সালে শুরু হওয়া প্রোডাক্টদের মধ্যে হটমেইল এখনো টিকে আছে, নাম পরিবর্তন করে। আমাদের এখানে এখনও অনেকেই হটমেইল ব্যবহার করেন। একসময় গড়ে ৩৫-৩৬ কোটি ব্যবহারকারী প্রতিমাসে হটমেইল ব্যবহার করতো। এখন জিমেইলের পাল্লায় পড়ে অনেকে সেখান থেকে সরে এসেছে।
হটমেইলের সহ প্রতিষ্ঠাতা সাবির ভাটিয়া আর জ্যাক স্মিথেওর কথাও এখন সেভাবে অনেকেই জানে না। তবে, হটমেইল সম্ভবত ডট কম বাবলের প্রথম সবচেয়ে বড় বেচা-কেনা। মাইক্রোসফট সে সময় রেকর্ড পরিমান টাকায় হটমেইল কিনে নিয়েছিল।
এডাম পেনবার্গের ভাইরাল লুপ বইতে হটমেইলের মার্কেটিং-এর শুরুর কথাটা আছে। সাবির ভাটিয়া আর জ্যাক স্মিথ সিলিকন ভ্যালির ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট টিম ড্রেপারের সঙ্গে মিটিং করছেন। টিম এরই মধ্যে ওদের জানিয়েছে যে, বিনামূল্যের ওয়েববেজড ই-মেইল সম্পর্কে তার যথেষ্ট আগ্রহ আছে।
“কিন্তু”
টিম জানতে চান – তোমরা এই খবরটা কেমন করে সবার কাছে পৌছে দেবে?
ভাটিয়া তৎক্ষণাৎ জবাব দিয়ে দিল – “আমরা সব জায়গায় বিল বোর্ড বসায় দিবো”।
বিনামূল্যের কোন পন্যের জন্য এরকম ব্যয়বহুল চিন্তা সরাসরি নাকচ করে দেন টিম।
রেডিও বিজ্ঞাপন? ভাটিয়ার প্রস্তাব। একই কথা। অনেক টাকা।
তাহলে ইন্টারনেটে যাদের ই-মেইল আছে তাদের ই-মেইল পাঠায় দেই! ভাটিয়া মোটামুটি আইডিয়া ফ্যাক্টরি।
“না। কারণ স্প্যাম মেইল কেউ পছন্দ করে না।’
তাহলে? সবাই একটু ভাবতে শুরু করলো। তারপরই টিম ড্রেপার একটা অদ্ভুত প্রস্তাব করলেন – “আচ্ছা, তোমরা কি প্রত্যেকের স্ক্রিনে একটা মেসেজ দেখাতে পারবে?”
“হায়, হায়। আমরা নিশ্চয়ই সেটা করবো না।” ভাটিয়া আর স্মিথ দুজনই আপত্তি জানালো।
“কিন্তু
তোমরা সেটা কারিগরিভাবে করতে পারবে কিনা। ধরো, আমি জোর করছি। তোমরা একজনের ই-মেইলে একটা মেসেজ বসায় দিতে পারবা? তারপর ঐ বার্তা যখন আর একজনকে পাঠাবে তখন কি তাকেও মেসেজ দিতে পারবা?”
ইয়া, ইয়া – ভাটিয়া আর স্মিথের জবাব।
“ঠিক আছে। তাহলে বসিয়ে দাও ,” P.S : I
Love you. Get your free e-mail at Hotmail at the bottom”।
সামান্য এই বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ সিনারিওকে পরিবর্তন করে দেয়। এর মানে হলো প্রত্যেক হটমেইল ব্যবহারকারী যারাই হটমেইলে বার্তা পাঠাচ্ছে প্রত্যেকে হটমেইলের বিজ্ঞাপক হয়ে যাচ্ছে, নি:শব্দে। এটি খুবই কার্যকরী একটি কৌশল। বাড়তি কোন খরচ নাই। এটি ছোট্ট এবং সুন্দর বাক্য। যে পাচ্ছে সে কিন্তু এটিকে সেঅর্তে মার্কেটিং ভাবছেও না। বরং ভাবছে আমিতো এটা ব্যবহার করে তৃপ্তি পাচ্ছি, তাহলে আমার বন্ধুও সেটা ট্রাই করতে পারে। খেয়াল করলে বোঝা যায় আবার যারা এই বিজ্ঞাপনটি দেখছে তারা কোন পেইড মার্কেটিয়ারের কাছ থেকে এটি শুনছে না। বরং সে শুনছে এমন কারো কাছ থেকে যে কিনা নিজেই ঐ প্রোডাক্টটি ব্যবহার করছে। তার মানে ব্যবহারকারী মানেই নতুনকে ডেকে আনা, প্রতিবার বার্তা পাঠানো মানে বিজ্ঞাপন প্রচার করা। আর হটমেইলের লোকেরা সেগুলো এনালিসিস করে বের করে ফেলতে পারছে কে তাদের কাস্টোমার হচ্ছে, তার চিন্তা প্রকৃতি কেমন ইত্যাদি ইত্যাদি।
সে সময় এই আইডিয়াটা কতোটা বৈপ্লবিক ছিল তা চিন্তা করাটা এখন বেশ কঠিন। রায়ান হলিডে তার গ্রোথ হ্যাকার মার্কেটিং বই-এর শুরুতে গ্রোথ হ্যাকিং কী বোঝাতে এই উদাহরণটি ব্যবহার করেছেন। তারপর তিনি পেটস ডট কমের উদাহরণও দেন যারা কিনা হটমেইলের বছর কয়েক পর টিভি আর বিলবোর্ডের পেছনে ১.২ মিলিয়ন ডলার খরচ করেও দোকান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
কিন্তু ড্রেপারের পরামর্শ গ্রহণের পর হটমেইলের জ্যামিতক হারে উন্নতি হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে তাদের ব্যবহারকারীর সংখ্যা হয় ১০ লক্ষ। তারপরের ৫ সপ্তাহে সেটি দ্বিগুণ হয়েছে। ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে ১ কোটি ব্যবহারকারী নিয়ে হটমেইল মাইক্রোসফটের কাছে বিক্রি হয় মাত্র ৪০০ মিলিয়ন ডলারে! শুরুর মাত্র ৩০ মাসের মধ্যে হটমেইলের ব্যবহারকারী ৩০ মিলিয়নে (৩ কোটি) পৌঁছে। নতুন নামে হটমেইল কিন্তু এখনও টিকে আছে।
নতুন পদ্ধতির এই হলো বাহাদুরি। ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ব্র্যানড শুরু হয়েছে মাত্র তিন লক্ষ ডলারের বিনিয়োগ থেকে এবং জন্ম দিয়েছে একটি নতুন মার্কেটিং পদ্ধতির। আর হটমেইলের ঘটনাটি কোন ফ্লুক নয়। জি-মেইলের শুরুর কথা মনে আছে? প্রথমে গুগল একটা প্রোডাক্ট বানালো, হটমেইল থেকে ভাল। তারপর এটাকে বানালো “ইনভাইট অনলি”। মানে একজন তার পরিচিত জনকে কেবল জিমেইল একাউন্ট পাবার জন্য একটা ইনভাইটেশন পাঠাতে পারবে। তারপর একসময় এটা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিল। সেই একই হটমেইল মার্কেটিং পলিসি। আর এখন ফ্রি ই-মেইল সার্ভিসের মধ্যে জিমেইলই সম্ভবত সেরা!
গত কদিন ধরে একটি নতুন উদ্যোগের জন্য মার্কেটিং পলিসি ঠিক করার চেষ্টা করছি। আর সেটা করার জন্য পড়ালেখা করছি নতুন করে। এর আগে ইনোসন্টের শরবত পড়ার সময় তাদের মার্কেটিং কৌশলটা সবার সঙ্গে শেয়ার করেছিলাম। এরপর অনেকদিন মার্কেটিং নিয়ে তেমন একটা পড়ালেখা করা হয়নি। এখন আবার পড়ছি। খান কতক বই পড়বো। এরমধ্যে গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিংটা রেখেছি। মজার ব্যাপার হলো এই বই না পড়েই আমি আমার পড়ো পড়ো পড়োর জন্য নাকি এ বইতে বলা পদ্ধতিই অনুসরণ করেছি।
সে যাই হোক, মার্কেটিং নিয় আমার এমনিতে কিছু ধারণা আছে যদিও আমি সে অর্থে মার্কেটিং-এর লোক নয়। কিন্তু, আমার নিজের ধারণা গণিত অলিম্পিয়াডের মার্কেটিং-এ আমরা ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং-এর সর্বোচ্চ পন্থাটাই ব্যবহার করেছি। পরে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন পদ্ধতি। এগুলো সামারি করে একটা নতুন উদ্যোগের মার্কেটিং-এ সাহায্য করবো আর নতুন কিছু পড়রে সেটা সবার জন্য শেয়ার করবো।
মার্কেটিং হলো উদ্যোক্তাদের এক ধরণের যন্ত্রণার নাম। বিশেষ করে নতুন উদ্যোক্তাদের। একটা বড়ো কারণ হলো প্রোডাক্ট বানাতেই তাদের ধারকর্জের দিন মেষ হয়। ফলে মার্কেটিং-এর জন্য বাড়তি টাকা পয়সা থাকে না। ফলে প্রচলিত মার্কেটিং টুলসগুলো ব্যবহার করাটা তেমন একটা সম্ভব হয় না। আমাদের সবেধন নীলমনি তাই হয়ে দাড়িয়েছে ফেসবুক মার্কেটিং। যদিও এটা সবার জন্য সাফল্য বয়ে আনছে না। আমার হিসাবে মাত্র ১০-২০ শতাংশ নতুন উদ্যোক্তা তার মার্কেটিং-এর খরচকে সার্থক ভাবতে পারেন। আমাদের দেশেও অনেক বৈপ্লবিক মার্কেটিং-এর চিন্তা আছে। বিশেষ করে ৩০০ টাকার এনার্জি বাল্ব ১০০ টাকায় বিক্রির ব্যাপারটা আমাদেরই উদ্ভাবন মনে হচ্ছে (এটা নিয়ে কেউ কোন রিসার্চ করেছে? )। কাজে আমরা হয়তো নতুন কোন পদ্ধতি এরই মধ্যে বের করে বসে আছি। যাহোক আমার অন্বেষা চলুক।
সবার মার্কেটিং-এর সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।
গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং-২ : কাজের জিনিষ বানাও
বিগত কিছুদিন যাবৎ অনেক স্টার্টআপের সঙ্গে আমার ফান্ডিং নিয়ে আলাপ হচ্ছে। বেশিরভাগই হতাশ। কারণ সে অর্থ কোথাও ফান্ডিং পাওয়া যাচ্ছে না। আবার যা পাওয়া যাচ্ছে সেটা প্রত্যাশিত নয়। এ নিয়ে একজন ইন্টারন্যাশনাল কনসালটেন্টের সঙ্গে আলাপ করলাম। তিনি আমার কাছে জানে চাইলেন ওরা যা নিয়ে কাজ করে সে সমস্যাগুলো তারা কোথা থেকে খুঁজে নিয়েছে? সেগুলো কি কোন ন্যাশনাল রিপোজিটরি থেকে পেয়েছে না কি নিজেরা আইডেন্টিফাই করেছে? বললাম বেশিরভাগই নিজেদের ইনোভেশন। বললো – ঐটাই সমস্যা। ওরা যেটাকে সমস্যা মনে করছে সেটাকে সমস্যা ভাবছে না ফান্ডাররা, আর ফান্ডাররা যেটাতে ফান্ড করবে সেটা কেউ বানাচ্ছে না।
বললাম – ওস্তাদ। তাহলে সমাধান কী?
ওস্তাদ হাসলেন। বললেন – পড়ো পড়ো পড়ো। পরেরবার এসে তোমার পড়াশোনার সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা যোগ করবো।
বললাম – ওস্তাদ। তাহলে সমাধান কী?
ওস্তাদ হাসলেন। বললেন – পড়ো পড়ো পড়ো। পরেরবার এসে তোমার পড়াশোনার সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা যোগ করবো।
তো আমার একটা কাজ হলো পড়া। তো পড়তে পড়তে খেয়াল করলাম আমাদের সমস্যা খুঁজে পাওয়ার চোখ কই।
কেন বলছি? আচ্ছা আগে কয়েকটা ইনোভেশনের খোঁজ নেওয়া যাক।
উবার : উবার এখন আমার ইন্টারেস্টের কেন্দ্রে আছে। এর মার্কেট ভ্যালু হচ্ছে ৬০ বিলিয়ন ডলার। টাকার হিসাবটা করিনা। কিন্তু উবার কী এমন যুগান্তকারী ধারণা যেটা আমাদের কারও মাথা থেকে বের হলো না? এটার তো সকল উপাদান আমাদের সমাজেই। বরং আমেরিকা বা সিঙ্গাপুরে ট্যাক্সি অনেকটা এভেইলেবল। পাবলিক ট্রান্সপোর্টও ভাল। কিন্তু আমাদের দেশ হলুদ ট্যাক্সি দেখলেও চড়া যায় না, সিএনজিওয়ালারা তো রাস্তার রাজা। এবং এ দেশেও অনেক বেকার গাড়ি ছিল (এখন সেগুলো দেখা যাচ্ছে)। তাহলে রাইড শেয়ারিং-এর আইডিয়াটা আমাদের কারও মাথা থেকে বের হওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো হয়নি। কারণ কী – কারণ আমাদের যারা উদ্ভাবক হতে চায় তারা ‘আইডিয়া’ খোঁজে, সমস্যা খোঁজে না। খুঁজলে এখনও অনেক সমস্যা আছে যেগুলোর সমাধান দরকার তারা খুঁজে পেতো। আইডিয়ার পেছনে দৌড়ায় দেখে ফান্ডাররা টাকা দিতে চায় না, দিলেও এমন সব কাগজপত্র খুঁজতে থাকে তখন মনে হয় ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’।
উবার : উবার এখন আমার ইন্টারেস্টের কেন্দ্রে আছে। এর মার্কেট ভ্যালু হচ্ছে ৬০ বিলিয়ন ডলার। টাকার হিসাবটা করিনা। কিন্তু উবার কী এমন যুগান্তকারী ধারণা যেটা আমাদের কারও মাথা থেকে বের হলো না? এটার তো সকল উপাদান আমাদের সমাজেই। বরং আমেরিকা বা সিঙ্গাপুরে ট্যাক্সি অনেকটা এভেইলেবল। পাবলিক ট্রান্সপোর্টও ভাল। কিন্তু আমাদের দেশ হলুদ ট্যাক্সি দেখলেও চড়া যায় না, সিএনজিওয়ালারা তো রাস্তার রাজা। এবং এ দেশেও অনেক বেকার গাড়ি ছিল (এখন সেগুলো দেখা যাচ্ছে)। তাহলে রাইড শেয়ারিং-এর আইডিয়াটা আমাদের কারও মাথা থেকে বের হওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো হয়নি। কারণ কী – কারণ আমাদের যারা উদ্ভাবক হতে চায় তারা ‘আইডিয়া’ খোঁজে, সমস্যা খোঁজে না। খুঁজলে এখনও অনেক সমস্যা আছে যেগুলোর সমাধান দরকার তারা খুঁজে পেতো। আইডিয়ার পেছনে দৌড়ায় দেখে ফান্ডাররা টাকা দিতে চায় না, দিলেও এমন সব কাগজপত্র খুঁজতে থাকে তখন মনে হয় ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’।
মিনিপ্যাক: আমাদের দেশের একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন (কিংবা কাস্টোমাইজেশন, আমি সঠিক জানি না) হলো মিনিপ্যাক শ্যাম্পু। এটার উদ্ভাবন কেমন করে হয়েছে? হয়েছে যখন আমাদের শ্যাম্পুওয়ালারা আবিস্কার করেছে গার্মেন্টস কর্মীরা ১০০+ টাকা দিয়ে শ্যাম্পুর বোতল কেনে না কিন্তু তারা শ্যাম্পু ব্যবহার করতে চায়। কেন কেনে না সেটা এ আলোচনায় মুখ্য না তাই ওটাতে যাচ্ছি না। কিন্তু গার্মেন্টসের বিকাশ হচ্ছে কিন্তু তাদের কাছে শ্যাম্পু পৌঁছানো যাচ্ছে না – এ সমস্যাটা নিয়ে প্রায় একসঙ্গে ভাবতে শুরু করে দেশের শীর্ষ তিনটি কনজিউমার প্রোডাক্ট কোম্পানি। এবং সেখানেই এই আইডিয়াটা মাথায় আসে – ১/২ টাকায় শ্যাম্পু দেওয়া যাতে একেবারে তৃণমূলেও পৌছে দেওয়া যায়। এর ফলাফলটাও আমরা জানি। মিনি প্যাক শ্যাম্পুর জন্য বিশাল অংকের মার্কেটিং করতে হয়নি। কারণ এটা খুব দ্রুত ওয়ার্ড অব মাউথ হয়েছে। তারপর গার্মেন্টসের কর্মীরা যখন নিজের বাড়িতে গিয়েছে তখন গ্রামের গৃহবধুরাও এই ম্যাজিক শ্যাম্পুর প্রেমে পড়ে গেছে। এখন সব শ্যাম্পুওয়ালার এই মিনিপ্যাক আছে!
উবার আর মিনিপ্যাকের উদাহরণ থেকে বোঝা যায় এমন কিছু যদি করা যায় যা কী না একটা বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করে তাহলে সেটার বিক্রি, বিপণন নিয়ে ভাবে হয় না। আমরা প্রায় সবাই উবারের মার্কেটিং করি। দেশের কোন দৈনিক পত্রিকায় উবারের বিজ্ঞাপন ছাপা হয় নি। কিন্তু তমা ট্যাক্সির চেয়ে বেশি লোক উবারের কথা জানে। উবারের মার্কেটিং পলিসিই হলো হট-মেইলের সেই গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং। উবার এমন সেবা দেয় (বা দিতে চায়) যা কী না সেবা গ্রহীতাকে উদ্বুদ্ধ করে তাদের মিনি/মাইক্রোমার্কেটিং করতে। যেমন – এই কোডটি আপনার কোন বন্ধুকে পাঠাতে পারেন যাতে সে একটা ফ্রি উবার রাইড পেতে পারে!!!
সহজ, নয় কি।
আমার গুরু, ওয়াইসির পল গ্রাহামের একটা চার শব্দের কোটেশন আছে, “Make
stuff people want”। মানুষ চায় এমন জিনিষ বানাও।
তার মানে বোঝা যাচ্ছে যে, এমন জিনিষ বানাতে হবে যেটা মানুষে চায়। প্রশ্ন হচ্ছে মানুষ কী চায় সেটা কীভাবে জানা যাবে?
সেটাই আমরা জানবো পরের পর্বে।
গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং-৩: কাজের জিনিষ কোথায় পাই?
একজন মার্কেটিয়ারের সবচেয়ে বড় দু:খ কী?
এমন জিনিষ তাকে বিক্রি করতে বলা যা কী না কারও দরকার নাই!!!
দরকারের ব্যাপারটা অবশ্য ইদানীং আপেক্ষিক। কারণ এমন অনেক পন্য বা সেবা বের হচ্ছে যা আগে মোটেই দরকার ছিল না। কিন্তু বের হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে সেটি ছাড়া জীবন অচল। নিকোলাম টেসলা যখন স্মার্টফোনের কথা ভেবেছিলেন তখন কী তিনি এটা ভেবেছেন যে এটি একেবারে সর্বব্যাপী হবে? কে বা ভেবেছে বিশ্বের প্রতি তিনজনের একজন ফেসবুক ব্যবহার করবে? কিংবা মিনিপ্যাক শ্যাম্পুর উদ্ভাবন হবে এবং সেটা শ্যাম্পুকে আম জনতার কাছে পৌছে দিয়ে প্রমাণ করবে – When numbers outnumbered the numbers!
প্রশ্ন হচ্ছে এমন একটা কাজের জিনিষ কেমন করে বানানো যায়? যে জিনিষটা বাজারের উপযোগী সেটা খুঁজে পাওয়ার উপায় কী?
প্রশ্ন হচ্ছে এমন একটা কাজের জিনিষ কেমন করে বানানো যায়? যে জিনিষটা বাজারের উপযোগী সেটা খুঁজে পাওয়ার উপায় কী?
এয়ারবিএনবির কথা ধরা যাক। এখন এটির ভ্যালুয়েশন কয়েক বিলিয়ন ডলার। আজকে আমরা জানি এ হলো রিয়েলস্টেট শেয়ার করার একটা সাইট। ফাউন্ডার ব্রায়ান চেস্ককি ব্যাপারটা এভাবে বলেন, “”you can book space anywhere. It can
be anything, and it really is anything from a tent to a castle.” মানে তাবু থেকে দুর্গ খুঁজে পাওয়ার উপায়। কিন্তু ২০০৭ সালে কী ব্যাপারটা এরকম ছিল?
২০০৭ সালে ব্রায়ান তাদের লিভিং রুমকে একটা ছোট “বেড এন্ড ব্রেকফাস্ট” বানাতে চেয়েছে। এ জন্য ঐ রুমে বায়ু ভর্তি ম্যাট্রেস দেওয়া হতো আর সকালে অতিথিদের জন্য সকালের নাস্তা। বোঝাই যাচ্ছে এই সার্ভিসের নাম ছিল Airbedandbreakfast.com।
তবে ব্রায়ান এতটুকুতে সন্তুষ্ট থাকতে চাইলো না। কাজে এর পরপরই সে ব্যাপক উদ্যমে মার্কেটিং-এ নেমে পড়ে নাই। যা করছে তা হলো নিজের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে খবরটা পৌছে দিল যে, হোটেলে যায়গা না পেলে আমার এখানে থাকতে পারো। (২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রেকিার জোহানেসবার্গে গিয়ে এরকম একটা বিবিতে কয়েকদিন থাকতে হয়েছে হোটেল জায়গা পাইনি বলে। তবে সেখানে খাট ছিল, বাতাসভর্তি ম্যাট্রেস ছিল না!)। হোটেলে চাপ থাকলেই ব্রায়ান ভাল খদ্দর পেয়ে যেতো। ব্রায়ান যদি এতেই সন্তোষ হতো তাহলে আজকে এই উদাহরণ পড়া লাগতো না।
কয়েকদিন পরে এটাকে রিপজিশন করা হলো যে হোটেল জায়গা না পেলে এই জায়গাকে নেটওয়ার্কিং সেশনের জন্য ব্যবহার করা যাবে। তবে, সেটাতেও স্থির থাকা গেল না। কারণ ব্রায়ানের মনে হলো হোটেলের গেস্টদের টার্গেট করার চেয়ে যে সব পর্যটক হোটেলে থাকতে চায় না আবার হোস্টেলের সোফায় ঘুমাতে চায় না তাদেরকে টার্গেট করা যায়। কিছুদিন যাবার পর ফীডব্যাক নিয়ে Airbedandbreakfast.com কে ছোটকরে Airbnb.com করা হলো (ফেসবুকের প্রথম ইউআরএল মনে আছে?)। আর বাদ দেওয়া হল ব্রেকফাস্ট আর নেটওয়ার্কিং অপশন। এতে দেখা গেল বিরাট সংখ্যক লোক, যাদের একস্ট্রা রুম পড়ে আছে, তারা আগ্রহী হয়েছে সেবা দেওয়ার জন্য। বাড়তি সার্ভিস না ধাকাতে,(সকালের নাস্তা বা নেটওয়ার্কিং-এর হ্যাসল বাদ দেওয়াতে, সার্ভিস অফার করার লোক বেড়ে গেল। কাজে শেষ পর্যন্ত ব্রায়ানদের সাইট হয়ে গেল বিশ্বের যে কোন জায়গায় যে কোন ধরণের থাকার জায়গা শেয়ারের সাইট। এখন তো রুম, এপার্টমেন্ট, তাবু, নৌকা, বজরা, দুর্গ কিংবা প্রাসাদ সবই আছে এয়ারবিএনবিতে। একসময় গ্রেগরি পেকের কাম সেপ্টেম্বরের মতো প্রাসাদও পাওয়া যাবে।
ম্যাট্রেসে থাকার আইডিয়াটা ২০০৭ সালে খুবই ভাল আইডিয়া ছিল। সেখানেই জোরদিয়ে ব্রায়ান এটাকে অনেক বড় করতে পারতেন, হয়তো। কিন্তু তিনি রিজিড ছিলেন না। তারা বরং ফীডব্যাকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে প্রোডাক্টটাকে পরিবর্তন করেছেন এবং এরপর কয়েকধাপে আজকের প্রোডাক্টে পৌছেছেন।
তবে, সে সময় এয়ারবিএনবিই একমাত্র লোকেশন বেজড স্যোসাল মিডিয়া ছিল না। Burbn নামে সে সময়ে আর একটা সামাজিক মাধ্যম ছিল। তবে, সেটিতে সামাজিক যোগাযোগের বাইরে ছবি শেয়ারের একটা অপশনাল সার্ভিস ছিল। সে সময় তারা ভাল লোকজনের সাড়া আর পাঁচ লক্ষ ডলারের বিনিয়োগ যোগাড় করে। কিন্তু উদ্যোক্তারা লক্ষ করলেন এর ব্যবহারকারীরা মূলত ছবির কারবারেই বেশি ব্যস্ত। কাজে তারা একটা মিটিং-এ বসলেন – “We sat down and said, ‘What are we
going to work on next? How are we going to evolve this product into something
millions of people will want to use? What is the one thing that makes this
product unique and interesting?’”
ভেবেচিন্তে তারা ভাবলেন কেবল ছবি শেয়ারের ব্যাপারটাই থাক। নতুন নাম দিয়ে কেবল ছবি শেয়ারিং-এর এপ হিসাবে বাজারে আসার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের এক লক্ষ ব্যবহারকারী হয়ে যায়। আর ফেসবুক ইনস্টাগ্রামকে কিনে নিয়েছে মাত্র একশ কোটি ডলারে!
দুইটি কোম্পানিই কিন্তু তাদের “কাজের জিনিষ” খোঁজার জন্য ব্যাপক সময় নিয়েছে এবং একাধিকবার প্রোডাক্টের দর্শন পরিবর্তন করেছে। এভাবে তারা খুঁজে পেয়েছে, গ্রোথ হ্যাকাররা যাকে বলে পিএমএফ (প্রোডাক্ট মার্কেট ফিট বাজারের জন্য দরকারি প্রোডাক্ট) । এরিক রাইজ তার লিন স্টার্টআপ বই-এ ঠিক একথাটা বলেছেন। একটা মিনিমাম ভায়াবল প্রোডাক্ট দিয়ে শুরু করে দ্রুত এটাকে আইটেরেশানের মধ্যে নিয়ে যাওয়া।
তারমানে প্রোডাক্ট তৈরির জন্য অপেক্ষা না করে মার্কেটিয়ারের উচিৎ হবে শুরু থেকে প্রোডাক্টকে বাজারে নিয়ে ফিডব্যাক নিয়ে আসা, ইনপুট দেওয়া।
তারমানে প্রোডাক্ট তৈরির জন্য অপেক্ষা না করে মার্কেটিয়ারের উচিৎ হবে শুরু থেকে প্রোডাক্টকে বাজারে নিয়ে ফিডব্যাক নিয়ে আসা, ইনপুট দেওয়া।
প্রশ্ন হচ্ছে এই ফীডব্যাক আর পরিবর্তন উদ্যোক্তা কেমন করে পাবেন? আর পরিবর্তনটাই বা কেমন করে করবেন।
ইনস্টাগ্রাম ও এয়ারবিএনবির ব্যাপারটা ভাল মতো বুঝলে সেটার অনেকখানিই বোঝা হয় যায়। তবে আগামী পর্বে এ সংক্রান্ত রায়ানের অভিজ্ঞতার আলোকে আমার পড়ো পড়ো পড়ো মার্কেটিং-এর ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করবো।
ইনস্টাগ্রাম ও এয়ারবিএনবির ব্যাপারটা ভাল মতো বুঝলে সেটার অনেকখানিই বোঝা হয় যায়। তবে আগামী পর্বে এ সংক্রান্ত রায়ানের অভিজ্ঞতার আলোকে আমার পড়ো পড়ো পড়ো মার্কেটিং-এর ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করবো।
গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং-৪: কাজের জিনিষ কেমনে বানাই?
আগের পর্বে আমরা দেখেছি গ্রোথ হ্যাকার মার্কেটিয়াররা সম্পূর্ণ প্রোডাক্ট তৈরি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে না। তারা শুরু থেকেই প্রোডাক্টের গুনাগুন যাচাই-বাছাই-এর জন্য মার্কেট থেকে ফিডব্যাক নিতে থাকে এবং সেটি প্রোডাক্ট টিমকে জানায়।
প্রশ্ন হচ্ছে এই কাজটি কেমন করে করা যায়। রায়ান তার বই-এ একটি উদাহরণ দিয়েছেন বই নিয়ে।
রায়ান অনেকগুলো বেস্টসেলার বই-এর মার্কেটিং-এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি দেখেছেন যেসব লেখক অজ্ঞাতবাসে গিয়ে বই লিখে ফেরৎ এসেছে, তারপর ব্যাপক মার্কেটিং করেছে তাদের সাফল্য কম। কিন্তু যারা শুরু থেকে পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছে তাদের সাফল্য অনেক বেশি।
প্রশ্ন হচ্ছে এই কাজটি কেমন করে করা যায়। রায়ান তার বই-এ একটি উদাহরণ দিয়েছেন বই নিয়ে।
রায়ান অনেকগুলো বেস্টসেলার বই-এর মার্কেটিং-এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি দেখেছেন যেসব লেখক অজ্ঞাতবাসে গিয়ে বই লিখে ফেরৎ এসেছে, তারপর ব্যাপক মার্কেটিং করেছে তাদের সাফল্য কম। কিন্তু যারা শুরু থেকে পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছে তাদের সাফল্য অনেক বেশি।
পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগ মানে লেখকের ব্লগ, স্যোসাল মিডিয়া ইত্যাদি। সফল লেখকেরা এমনকি তাদের বই-এর বিষয়বস্তুও অনেক সময় পাঠকের কাছ থেকে পেয়েছে।
বিদেশে বই প্রকাশের ব্যাপারটা আমাদের দেশের মতো নয়। আমাদের এখানে একজন লেকক একটা বই লিখে ফেলেন তারপর প্রকাশকের কাছে যান। আর কিছু সৌভাগ্যবান লেখক আছেন প্রকাশক তাদের কাছে আসেন। কিন্তু পশ্চিমে লেখকদের প্রথমে তাদের বই-এর আইডিয়া জমা দিতে হয় প্রকাশকের কাছে। প্রকাশকের সম্পাদক, বিপননকর্মী ইত্যাদি সেটা দেখে ব্যাপারটা এপ্রূভ করেন। তারপর লেখা। লেখার সময় সম-বিরতিতে সম্পাদকেরা ফীডব্যাক দিতে থাকেন এবং সেভাবেই বই লেখা শেষ হয়।
এখন এই ফীডব্যাকে সম্পাদকদের ছাড়াও সরাসরি পাঠকদের নিয়ে আসার কথাই বলা হচ্ছে। সেটা কীভাবে হতে পারে?
প্রথম লেখক তার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার পাঠকদের জানাতে পারেন তিনি নতুন কি বিষয় নিয়ে ভাবছেন। তখন তিনি পাঠকের একধরণের ফীডব্যাক পাবেন। এরপর তিনি তার লেখার কথা বলতে পারেন তার ব্লগে। সেখানে তিনি যেটুকু লিখেছেন তার অংশ বিশেষ শেয়ার করতে পারেন। তাতে পাঠকেরা শুরু থেকে বই-এর সঙ্গে একাত্ম হতে পারেন। রায়ানের মতে এই বইগুলোর বিক্রি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এবং এ মেথডযে কাজ করে তা আমার চেয়ে ভাল কে জানে। আমি কয়েক বছর আগে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রথম বর্ষের কিছুদিনের অভিজ্ঞতা ফেসবুকে ১০ পর্বে নোটাকারে প্রকাশ করি। পরে যথন আমার ওয়েবসাইট তৈরি হয় তখন আমি সেগুলোর সবটুকু একত্রে আমার সাইটে প্রকাশ করি। সেই লেখা পড়ে আদর্শ প্রকাশনীর প্রকাশক মাহবুব রাহমান একদিন আমার অফিসে আমার কাছে আসে। তার বক্তব্য এটিকে বড় করে একটি বই করে ফেলেন। আমি তার কাছে জানতে চাই – আমার মতো মানুষের আত্মজীবনীর অংশবিশেষ কেন মানুষ পড়বে বা ভাল করে বললে ‘টাকা দিয়ে কিনবে”?
“কতো বিক্রি হলো সেটাতো বড় না। বরং এটা বই হলো সেটাই বড়”।
প্রথম লেখক তার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার পাঠকদের জানাতে পারেন তিনি নতুন কি বিষয় নিয়ে ভাবছেন। তখন তিনি পাঠকের একধরণের ফীডব্যাক পাবেন। এরপর তিনি তার লেখার কথা বলতে পারেন তার ব্লগে। সেখানে তিনি যেটুকু লিখেছেন তার অংশ বিশেষ শেয়ার করতে পারেন। তাতে পাঠকেরা শুরু থেকে বই-এর সঙ্গে একাত্ম হতে পারেন। রায়ানের মতে এই বইগুলোর বিক্রি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এবং এ মেথডযে কাজ করে তা আমার চেয়ে ভাল কে জানে। আমি কয়েক বছর আগে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রথম বর্ষের কিছুদিনের অভিজ্ঞতা ফেসবুকে ১০ পর্বে নোটাকারে প্রকাশ করি। পরে যথন আমার ওয়েবসাইট তৈরি হয় তখন আমি সেগুলোর সবটুকু একত্রে আমার সাইটে প্রকাশ করি। সেই লেখা পড়ে আদর্শ প্রকাশনীর প্রকাশক মাহবুব রাহমান একদিন আমার অফিসে আমার কাছে আসে। তার বক্তব্য এটিকে বড় করে একটি বই করে ফেলেন। আমি তার কাছে জানতে চাই – আমার মতো মানুষের আত্মজীবনীর অংশবিশেষ কেন মানুষ পড়বে বা ভাল করে বললে ‘টাকা দিয়ে কিনবে”?
“কতো বিক্রি হলো সেটাতো বড় না। বরং এটা বই হলো সেটাই বড়”।
মাহবুবের কথায় রাজী হওয়ার পর আমি ভাবলাম আমি তাহলে বই-এ কী কী লিখবো। তারপর আমি কখনো ফেসবুকে কখনো আমার সাইটে যা আমি বই-এ লিখতে চাই সেগুলো লিখতে শুরু করি। তখনই আমার সাইট আর ফেসবুকের পাঠকরা বই নিয়ে আগ্রহ দেখায় এবং বিভিন্ন ফীডব্যাক দিতে থাকে। তাদের ফীডব্যাক নিয়েই আমি বইটা শেষ করি। আমার আর মাহবুবের ধারণা বাতিল করে দিয়ে ক্রেতারা এরই মধ্যে পড়ো পড়ো পড়ো এর দ্বিতীয় মুদ্রণ শেষ করে ফেলেছে।
তো, এ হলো মার্কেটের জন্য উপযোগী প্রোডাক্ট বানানোর বুদ্ধি। যারা গুহার ভেতর থেকে একদিন পাণ্ডুলিপি নিয়ে হাজির হয় তাদের পক্ষে বাজারমাত করাটা কঠিনই বটে। অন্যদিকে পাঠকের সঙ্গে যে সব লেখকের যোগাযোগ তারা বই-এর সম্ভাব্য নাম, সম্ভাব্য কভার এগুলো সবই শেয়ার করে এবং পাঠকের ফীডব্যাকের ভিত্তিতে সেটা চূড়ান্ত করে। কখনো কখনো তারা সংবাদপত্রে কি লিখছেন সেটা জানান দেন এবং কোন পাবলিক অনুষ্ঠানেও তার বই-এর কথা বলেন। এই ধরনের বই-এর বিপনন কিন্ত আমাদের মতো দেশেও অনেকখানি সোজা। ফলে এগুরো রিচ বাড়ে এবং সেটা সবজায়গাতেই যায়।
এ বিষয়ে মার্ক এন্ডারসেনের একটা কথা আছে। মার্ক হলো নেটসক্যাপের প্রতিষ্ঠাতা। নিং, ওপসওয়্যারের পেছনেও তাঁর অবদান আছে। একটা বড় ভেঞ্চার কোম্পানি চালানো ছাড়াও মার্ক কিন্তু ফেসবুক, ই-বে এবং এইচপির বোর্ডের মেম্বার। তার মতে কোম্পানিগুলো “do whatever is required to get to
product/market fit. Including changing out people, rewriting your product,
moving into a different market, telling customers no when you don’t want to,
telling customers yes when you don’t want to, raising that fourth round of
highly dilutive venture capital—whatever is required.”
অন্যভাবে বলা যায় এখন সবকিছুই তোমাকে টেবিলে রাখতে হবে।
ফীডব্যক!!!
মার্কেটিয়ারদের শুরু থেকে প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্টে যুক্ত রাখতে চাননা অনেকেই। কারণ সবার ধারণা যে জিনিস আমি বানাইনি সেটা কেমনে বিক্রি করবে? তবে, দিন এখন বদলাচ্ছে। আর মার্কেটিং মানে কিন্তু পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, বড় বড় বিলবোর্ড স্থাপন নয়। সেটি খুবই সাদামাটা ভাবে হতে পারে।
এবারনোটের কথা ধরা যাক। এই স্টার্টআপটি প্রোডাক্টিভিটি আর অর্গানাইজেশনাল টুলস বানিয়েছে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরুর কয়েকবছর মার্কেটিং-এ কোন টাকাই খরচ করেনি! কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ফিল লিবেনর বক্তব্য সোজা – যারা সেরা পন্য বানানোর বদলে অন্যকিছু চিন্তা করে তারা সেরা পন্য বানাতেই পারে না (“people [who
are] thinking about things other than making the best product, never make the
best
product.” )
কাজে এভারনোট “মার্কেটিং” বাজেটের সবটুকু প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্টে ব্যয় করে। এতে তাদের গ্রোথ প্রথমে বলতে গেলে কিছুই হয়নি কিন্তু তাদের প্রোডাক্টের মান হয়ে যায় আকাশ ছোঁয়া। এখনতো এটা নিজেই নিজের মার্কেটিং করে।
তো, একবার তারা তাদের সীমিত কাস্টোমারদের কাছে থেকে একটা অদ্ভুত ফীডব্যাক পেল। কাস্টোমাররা জানালো মিটিং-এ কম্পিউটার অন রেখে নোট নিলে “বস”রা মাইন্ড করে। সঙ্গে সঙ্গে এভারনোট টিম একটা স্টিকার বের করে যাতে লেখা – “I’m not being rude. I’m taking notes in Evernote.”
কাস্টোমাররা সেটি লাগানো শুরু করলো তাদের ল্যাপটপের ওপরে আর যেতে তাকলো মিটিং থেকে মিটিং-এ! ব্যাস এভারনোটের কাস্টোমাররাই হয়ে গেল তাদের বিলবোর্ড। মার্কেটিংই হলো কিন্তু শেষ পর্যন্ত।
কাজে যে মার্কেটিয়ার শুরু থেকে যুক্ত থাকবে তার একটা বড় কাজ হবে প্রশ্ন করতে থাকা?
এই প্রোডাক্টটা কারজন্য বানাচ্ছেন?
ঐ ব্যাটা কেন এটা কিনবে?
কাজে যে মার্কেটিয়ার শুরু থেকে যুক্ত থাকবে তার একটা বড় কাজ হবে প্রশ্ন করতে থাকা?
এই প্রোডাক্টটা কারজন্য বানাচ্ছেন?
ঐ ব্যাটা কেন এটা কিনবে?
এ জিনিস কার মাধ্যমে বেচবেন? সে ব্যাটা দোকানে এটা রাখবে কেন?
শুধু প্রশ্ন করবে? না, এই সকল প্রশ্নের উত্তর তার মার্কেটিয়ার বন্ধুদের জানাবে, প্রেসের সঙ্গে আলাপ করে ক্যাজুয়ালি। তবে এটুকেতে থেমে থাকা যাবে না বা কেবল বুন্ধুদের ফীডব্যাক নিরেই হবে না। কিছুদিনের মধ্যে মার্কেটিয়ার যখন জেনে যাবে কোন বাজাের জন্য এই প্রোডাক্ট তখন সে ফীডব্যাকের জন্য এই গ্রাহক-দলের কাছে যাবে। সার্ভে মাংকি বা গুগল ডকের মতো জলিপ সহায় টুল ব্যবহার করতে পারে কিংবা একই সঙ্গে অফলাইন কাগজ-জরিপও করতে পারে।
সব ফীডব্যাকনিয়েই যে ফিরতে হব তা নয়। কিন্তু যতো ডেটা ততো বিপদে না পড়ার সম্ভাবনা। যদি কখনো এ কথা বরথেই হয় যে, যা বানাচ্ছেন সেটা কোন কাজে আসবে না, তখন তো তোমার কাছে সে কথার পর্যাপ্ত প্রমাণ থাকতে হবেনা কি?
সব ফীডব্যাকনিয়েই যে ফিরতে হব তা নয়। কিন্তু যতো ডেটা ততো বিপদে না পড়ার সম্ভাবনা। যদি কখনো এ কথা বরথেই হয় যে, যা বানাচ্ছেন সেটা কোন কাজে আসবে না, তখন তো তোমার কাছে সে কথার পর্যাপ্ত প্রমাণ থাকতে হবেনা কি?
যারা ফলো করছে তারা এই ভিডিওটা দেখে নিতে পারে
একবার যদি কাজের জিনিষ বানোন যায়, তখন কেবল কাস্টোমার নিয়ে আসার ব্যাপারটাই থাকে।
গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং-৫: খুঁজো তোমার গ্রোথ হ্যাক!
গ্রোথ হ্যাকিং-এর একটা বড় ব্যাপার হলো কনফিডেন্স খুঁজে পাওয়া। সেটার জন্য শুরু থেকে কাজ করতে হয়। শুরু করার প্রাথমিক পর্যায় শেষে যদি সত্যিকারের পিএমএফ না পাওয়া যায় তাহলে কিন্তু ভিন্নকিছু ভাবতে হবে।
রেডিট-এর অ্যারন সোয়ার্য-এর কথা অনেকেই জানে। তবে, যেটা অনেকেই জানে না সেটা হলো রেডিটের আগে অ্যারন আরো দুইটা চেষ্টা করেছে। ১৯৯৯ সালে, উইকিপিডিয়ার আগেই, একটি কোলাবোরেটিভ বিশ্বকোষে সে হাত দেয়। আর একটা সাইট ওয়াচডগ.নেটও তার হাতে শুরু। দুটোই ফ্যানটাসটিক আইডিয়া। দুটোর পরের ভার্সন, অন্যের করা, এখন তুমুল জনপ্রিয়। কিন্ত অ্যারণ তো পারেনি। পারেনি কারণ শুরুর দিকের যতো ইউজার পেলে পরের ধাপে যাওয়া যায় সেটা কিন্তু অ্যারন যোগাড় করতে পারেনি। ফলে, সেটা নিয়ে আর আগানোও হয়নি। তার এই ব্যর্থতার কারণ হলো অ্যারণের বিশ্বাস। অ্যারন মনে করতো একটা ভাল প্রোডাক্ট বানালে কাস্টোমার নিজে থেকে তাঁকে খুঁজে নেবে। পরে লারিসা (নিউইয়র্কারের রিপোর্টারের) কাজে সে স্বীকার করেছে – কাস্টোমার নিজে থেকে আসে না, তাঁকে ধরে আনতে হয়।
রেডিট-এর অ্যারন সোয়ার্য-এর কথা অনেকেই জানে। তবে, যেটা অনেকেই জানে না সেটা হলো রেডিটের আগে অ্যারন আরো দুইটা চেষ্টা করেছে। ১৯৯৯ সালে, উইকিপিডিয়ার আগেই, একটি কোলাবোরেটিভ বিশ্বকোষে সে হাত দেয়। আর একটা সাইট ওয়াচডগ.নেটও তার হাতে শুরু। দুটোই ফ্যানটাসটিক আইডিয়া। দুটোর পরের ভার্সন, অন্যের করা, এখন তুমুল জনপ্রিয়। কিন্ত অ্যারণ তো পারেনি। পারেনি কারণ শুরুর দিকের যতো ইউজার পেলে পরের ধাপে যাওয়া যায় সেটা কিন্তু অ্যারন যোগাড় করতে পারেনি। ফলে, সেটা নিয়ে আর আগানোও হয়নি। তার এই ব্যর্থতার কারণ হলো অ্যারণের বিশ্বাস। অ্যারন মনে করতো একটা ভাল প্রোডাক্ট বানালে কাস্টোমার নিজে থেকে তাঁকে খুঁজে নেবে। পরে লারিসা (নিউইয়র্কারের রিপোর্টারের) কাজে সে স্বীকার করেছে – কাস্টোমার নিজে থেকে আসে না, তাঁকে ধরে আনতে হয়।
গ্রোথ হ্যাকারের কাজ হলো, অন্য সব মার্কেটিয়ারদের মতো, এই টেনে আনার কাজটা করা।
একটা ছোট স্টার্টআপ নিশ্চয়ই বিশাল অংকের টাকা খরচ করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে, পাঁচতারকা হোটেলে অনুষ্ঠান করে শুরু করতে পারে না। কারণ তার সে বাজটে তো নাই। কাজে লাইনতো সেটা নয়। কিন্তু তুমি যদি বাজারের জন্য আদর্শ প্রোডাক্ট বানাই ফেলতে পারো, তোমার প্রোডাক্ট যদি কাজের হয় তাহলে দৈনিক পত্রিকায় বিশাল কভারেজ তোমার দরকার নাই। তুমি অন্যভাবে কাজটা করতে পারো।
প্রথমত ভাবো শুরুতে তোমার কতোজন কাস্টোমার দরকার। একটি বহুল প্রচলিত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তুমি কি তাদের কাছে পৌছাতে পারবে?
প্রথমত ভাবো শুরুতে তোমার কতোজন কাস্টোমার দরকার। একটি বহুল প্রচলিত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তুমি কি তাদের কাছে পৌছাতে পারবে?
একটা দেশের উদাহরণ দেই। সরকার একটি হাই প্রোফাইল আইসিটি ফেলোশীপ দেবে যার মাসিক হার দুই লক্ষ টাকা। এ জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হল একেবারে সামনের সারির পত্রিকায়। কিন্তু একজনকেও পাওয়া গেল না যে কিনা এই ফেরোশীপের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিল। কাজ দিনক্ষণ বাড়াতে হল। কারণ কী? কারণ দুইটা জিপিএ ৫ আর ৩.৭৫ ওয়ালা কেউ পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেখে না!
তারমানে যে পদ্ধতিতে তুমি লাখ লাখ লোকের কাছে যেতে পারো, সেটা হয়তো তোমার জন্য নয়। তোমার দরকার প্রথম ১০০ বা ৫০০ কাস্টোমার। সংখ্যাটা খুব বেশি বড় না।
বাঁচা গেল। না কি?
তবে, পুরোনো মার্কেটিয়ারদের মতো তোমারও একই ধান্ধা। কাস্টোমার ধরে আনা। তবে, এর জন্য তুমি ব্যয়বহুল, লাখ লাখ লোকের থেকে মাত্র ১০০ জনকে না খুঁজে অন্য কোথাও সেটা খুঁজতে পারো। যেখানে খরচ কম, কস্ট কম।
ড্রপবক্সের কথা ধরা যাক। এখন তাদের প্রায় বিলিয়নের কাছাকাছি ব্যবহারকারী। কিন্তু যখন এই ফাইল-শেয়ারিং সার্ভিসটা চালু হয় তখন কিন্তু এটি এমনকি পাবলিকও ছিল না। আপনি মাথা খুটে মরলেও ড্রপবক্সের একাউন্ট নিজে থেকে পেতেন না। নতুনদের একটা লিস্টে নাম লিখতে হতো যেন একটা ইনভাইটেশন পাওয়া যায়। আর এই লিস্টে নাম লেখানোদের সংখ্যা বাড়ানোর বৃদ্ধি করে ড্রপবক্স একটা ফানি ভিডিও তৈরি করে।
না এই ভিডিওটা বানানোর জন্য তারা কোন গ্রে-ম্রেকে হায়ার করে নাই। নিজেরা একটা ফানি ভিডিও বানায়। যেখানে জোক, ছবি, রেফারেন্স এসব দিয়ে টিয়ে। আর এটা তারা রিলিজ করে ডিগ, স্ল্যাশডট আর রেডিটে।
না এই ভিডিওটা বানানোর জন্য তারা কোন গ্রে-ম্রেকে হায়ার করে নাই। নিজেরা একটা ফানি ভিডিও বানায়। যেখানে জোক, ছবি, রেফারেন্স এসব দিয়ে টিয়ে। আর এটা তারা রিলিজ করে ডিগ, স্ল্যাশডট আর রেডিটে।
ঐ তিন কমিউনিটির লোকেরা সেটি খুব দ্রুত গ্রহণ করে ফলে সেটা চলে আসে ঐসব কমিউটিনিটটর সামনের কাতারে। সেখান থেকে হাজার হাজার লোক নাম লেখানোর সাইটে (getdropbox.com) এসে নিজেদের না-থাম লিখতে থাকে। প্রথম রাতেই প্রায় ৭০ হাজার নতুন নাম যুক্ত হয়। এদের সবাইকে ট্র্যাক করা সম্ভব, সবাই দৃশ্যমান এবং ব্যপক সংখ্যক।
ড্রপবক্সের এটাই চাওয়া ছিল। তারা কিন্তু পত্রিকার লোকজনকে ডেকে কিছু বলে নাই। বলে নাই আমরা নতুন একটা কিছু বানাইছি আপনারা নিউজ করেন। আমাদের ইয়াং নাইটে নিয়ে যান। আমাদের দাওয়াত দেন আমরা মোটিভেশনাল স্পিচ দেই। কারণ তাদের এসবের দরকার নাই। তারা ঐ লিস্টেই নজর দিছে যা কিনা সপ্তাহখানেকের মধ্যে ৪০ লক্ষে পৌছে আর এখনকার কথা তো বললামই।
এটা তো সিলিকন ভ্যালির উদাহরণ। আমাদের ঝংকার মাহবুব তার বলদ টু বস বই-এর জন্য ঠিক এমন ধারা একটা কাজ করেছে। আর ১০ জন লেখকের মতো তার বই-এর বিজ্ঞাপন পত্রিকায় দেওয়ার জন্য ক্যা-কু করে নাই। কয়েকজন কাছের লোকের কাছে পাণ্ডুলিপি পাঠিয়েছে যেন তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটা নিয়ে কথা বলে। আমার সাইটে একটা বিজ্ঞাপন দিয়েছে আর নিজের পেজ আর প্রোফাইল থেকে প্রচারণা চালিয়েছে। আর সেখানে তার অনুসারীরা আগে থেকেই জানতো তার একটা বই বের হবে এবারের মেলায়। কাজেই মেলায় আসার কয়েকদিনের মধ্যে প্রথম লটটা বিক্রি হয়ে যায় এবং বই-এর কথা অনেক মানুষের কাছে পৌছে যায়।
প্রশ্ন হচ্ছে যে পদ্ধতি ড্রপবক্সের জন্য কাজ করেছে সেটা কপি করলে কী কাজ হবে?
হতেও পারে নাহও হতে পারে। ড্রপবক্সের পর মেইলবক্সও এই কাজ করে সফল হয়েছে। তবে, অন্য অনেকে এই কাজটা করে সুবিধা করতে পারেনি। দেশেও অনেক লেখক ফেসবুকে ব্যপকভাবে তাদের বই-এর বিজ্ঞাপন দিয়েছে, টাকা খরচ করেছে কিন্তু কাঙ্খিত বিক্রি হয়নি। তার একটা কারণ হলো হয়তো ঐ বইগুলো মার্কেট ফিট ছিল না, অথবা ওরা ঠিক লোকের কাছে খবরটা পৌছাতে পারে নাই।
হতেও পারে নাহও হতে পারে। ড্রপবক্সের পর মেইলবক্সও এই কাজ করে সফল হয়েছে। তবে, অন্য অনেকে এই কাজটা করে সুবিধা করতে পারেনি। দেশেও অনেক লেখক ফেসবুকে ব্যপকভাবে তাদের বই-এর বিজ্ঞাপন দিয়েছে, টাকা খরচ করেছে কিন্তু কাঙ্খিত বিক্রি হয়নি। তার একটা কারণ হলো হয়তো ঐ বইগুলো মার্কেট ফিট ছিল না, অথবা ওরা ঠিক লোকের কাছে খবরটা পৌছাতে পারে নাই।
আবার ২০১২ সালে ই-বে গোগো-র সঙ্গে একটা পার্টনারশীপ করে। গোগো হলো একটা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার যারা ফ্লাইটে ওয়াইফাই দিতো। ই-বে একটা চুক্তি করলো গোগো’র সঙ্গে। চুক্তিটা হলো ইনফ্লাইটে গোগোর ব্যবহারকারীরা ফ্রিতে ই-বে ব্রাউজ করতে পারবে!!!এটা হলো ফেসবুকের ফ্রি-বেসিকের মতো। গোগো তাদের সার্ভিসটা ফ্রিদিলো খালি ই-বের জন্য। ই-বের লাভ কী হলো। ডেল্টা আর ভার্জিন আমেরিকার ফ্লাইটগুলোতে ওরা ল্যাপটপওয়ালা এমন লোকদের পেতে থাকলো যারা কিনা প্লেন বিরক্ত হয়ে বসে আছে। কোন কাজ নাই। তখন তারা ই-বে তে ঢুকে কেনাকাটার ফন্দি করতে থাকলো।
দুইটা লাভ হলো। ডিজিটাল বলে ই-বে ট্র্যাক করতে পারলো কারা গোগো হয়ে আসছে। তারা কেনাকাটা করছে কী না সেটাও টের পেল। কাজে কাস্টোমার একুইজিশন কস্ট বের করে ফেললো। কাজটা কন্টিনিউ করা হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেওয়াটাও সহজ হয়ে গেল।
গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং-৬: নট অল পিপল, রাইট পিপল
মার্কেটিয়ারদের পুরানো চিন্তা হলো দ্রুত রাস্তায় বের হয়ে পড়া এবং যতো বেশিজনকে জানানো যায় ততোজনকে জানানোর বন্দোবস্ত করা। প্রোডাক্ট লঞ্চিং হয় বিশাল কোন হোটেলে, খবরের কাগজে থাকে পিআর, কখনো কখনো প্রথম আলো- ডেইলিস্টারের মলাট পাতার বিজ্ঞাপন – কী নয়! উদ্দেশ্য মহৎ – যাতে এটি একটি বাজওয়ার্ডে পরিণত হয়, বিপুল সংখ্যক লোক দেখে এবং কাস্টোমারে পরিণত হয়। মার্কেটিয়ারদের বেশি দোষও দেওয়া যায় না কারণ ক্লায়েন্টদের এই চাহিদা থাকে।
কিন্ত আসলে কী অনেক লাভ হয়? বিশেষ করে টেকি সার্ভিসের বেলায়? হয় না। হয় না বলেই গ্রোথহ্যাকারদের ধান্ধাটা হয় ভিন্ন। তাদের প্রথম উদ্দেশ্যই থাকে আর্লি এডাপ্টারদের খুঁজে বের করা, প্রথম ১০০ জন! যারা কেবল ব্যবহারকারী হবে না, একই সঙ্গে বিলবোর্ডও হবে! এর মানে তারা শুধু লয়্যাল নয়, ফ্যানাটিক ইউজারও বটে। কাজে গ্রোথহ্যাকারের সকল কাজের লক্ষ্য হবে এই লোকগুলোকে খুঁজে বের করে তাদের কাছে পৌছানো।
ওরা যদি টেকি গিক হয় তাহলে ওরা প্রতিদিন টেকক্রান্চ বা হ্যাকার নিউজ বা রেডিট খুলে বসে থাকে অথবা বছরজৃড়ে বিভিন্ন কনফারেন্সে যোগ দেয়।
তারা যদি ফ্যাশনসচেতন হয় তাহলে তারা নকশা পড়ে, সাজগোজ ডট কমে ঢু মারে, সাজুগুজু ফেবু গ্রুপে আড্ডা দেয়।
যদি তারা তোমার মতো উদ্যোক্তা হয় তাহলে তারা “চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেবো” গ্রুপের
মেম্বার হয়, স্টার্টআপ হাওকাওতে যায় আর কর্মশালা খুঁজে বেড়ায় যেখানে তার জন্য রসদ আছে।
কাজে তাদের মনোযোগ আকর্ষন করে তাদেরকে কাস্টোমার বানাতে হবে।
ট্রাভিস কালানিক আর জেরাট ক্যাম্পের উবারের কথা ধরা যাক। দীর্ঘদিন ধরে তারা অস্টিনে হওয়া এসএক্সএসডব্লিউ কনফারেন্সের লোকেদের উবার সার্ভিস দিয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে হাইলি টেকি, তরুন কিন্তু টাকা পয়সাওয়ালা, ক্যাব খুঁজে পায় না এমন লোকেদের উবার সুযোগ দিয়েছে তাদের ফ্রি রাইডের। এরা সবাই পটেনশিয়াল রাইডার। এক বছর দিয়েছে বারবিকিউ-এর অফার। ঠিক ঐ লোকগুলোকে তারা এমনভাবে খুঁজে নিয়েছে যাতে তাদের সেবাটাও ব্যবহার হলো আবার উদ্দিস্ট লোকের কাছেও পৌছানো গেল। বিজ্ঞাপন-বিলবোর্ডে টাকা খরচ না করে উবার বছরের এই এক সপ্তাহ তাদের সবাইকে একসঙ্গে পেয়েছে এবং তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে উবার এটিই বা করলো কেন? করলো কারণ তারা দেখেছে কয়েকবছর আগে টুইটারও একই কাজ করেছে!
এভাবে চিন্তা করাটাই জলো গ্রোথ হ্যাকারের কাজ। সঠিক লোকদের কাছে পৌঁছে তাদেরকে নিজের প্রোডাক্টের ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলা।
একটা সম্পূরক প্রশ্ন হতে পারে “সঠিক লোকদের আমি কোথায় খুঁজে পাবো?” এই প্রশ্নের উত্তর যদি তোমার কাছে সঙ্গে সঙ্গে অভিয়াস না হয় তাহলে তোমার ঐ প্রোডাক্ট মার্কেটিং করাই ঠিক হবে না।
শুরু করা এবং প্রথম টার্গেটের কাছে পৌঁছানোর জন্য তোমার অনেক অপশন আছে-
১. তোমার পটেনশিয়াল কাস্টোমাররা নিয়মিত ভিজিট করে এমন সাইট খুঁজে বের করে সেটির লেখকদের একটা ছোট্ট ই-মেইল ‘পিচ’ করা। ই-মেইলে থাকবে নিজেদের প্রোডাক্টের বর্ণনা এবং কী কারণে সেটি নিয়ে লেখা উচিৎ তার একটা বক্তব্য।
২.কোরা, হ্যাকারনিউজ কিংবা রেডিটে নিজেই একটা কিছু আপলোড করা যেখানে প্রোডাক্ট সম্পর্কে একটা কিছু থাকবে।
৩. নিজেই পপুলার বিষয়ে ব্লগ লেখা শুরু করতে পার। তাতে তোমার ব্লগের ভিজিটর বাড়বে এবং অপ্রত্যক্ষ কিছু মার্কেটিং-এর সুযোগ থাকবে।
৪. নিজের প্রোডাক্টটা কিক-স্টার্টারে দেওয়া যায়। তারপর যারা প্রথম কাস্টোমার হবে তাদেরকে ‘ঘুষ’ দেওয়ার বন্দোবস্ত করা যায়।
৫. হেল্প এ রিপোর্টারের মতো সার্ভিস থেকে এমন একজন রিপোর্টারকে খুঁজে বের করা যিনি তোমার প্রোডাক্ট সম্পর্ক লিখতে রাজী হবেন
৬. একজন একজন পটেনশিয়াল কাস্টোমারকে খুঁজে বের করে ওয়ান-টু-ওয়ান এপ্রোচ করে তাকে কাস্টোমার বানাতে পারো।
ওপরের ছয়টির মধ্যে একটি/দুইটিকে কাজে লাগোনো একটা ই-মেইল করার মতোই সহজ। যদি তোমার প্রোডাক্ট আসলেই “ভাল” হয় তাহলে সেটির ব্যাপারে কেউ না কেউ আগ্রহী হবে। মোদ্দাকথা হলো এ থেকে ইনিশিয়াল কাস্টোমার ধরার কাজটা তোমাকে করতে হবে।
ওপরের ছয়টির মধ্যে একটি/দুইটিকে কাজে লাগোনো একটা ই-মেইল করার মতোই সহজ। যদি তোমার প্রোডাক্ট আসলেই “ভাল” হয় তাহলে সেটির ব্যাপারে কেউ না কেউ আগ্রহী হবে। মোদ্দাকথা হলো এ থেকে ইনিশিয়াল কাস্টোমার ধরার কাজটা তোমাকে করতে হবে।
যদি কোন ‘স্টান্টবাজি’ করতে পারো তাহলে সেটাও কাজের হতে পারে।
প্যাট্রিক ভাস্কোভিট, প্রথম দিককার একজন গ্রোথ হ্যাকারের বক্তব্য হলো প্রোডাক্ট যদি ব্যাপক উদ্ভাবনী হয় তাহলে সেটা খুব সহজেই একটা উদ্ভাবনী চ্যানেল পেয়ে যায়।
তখন অনেক কিছু করা যায়। যেমন –
১. মেইলবক্সের মতো তুমি শুরুতে তোমার সার্ভিস কেবল “আমন্ত্রিতদের জন্য” রাখতে পারো।
২. রেডিট যেমন শুরুতে করেছিল সেরকম তুমিও প্রচুর লাইক কিনতে পারো, নিজেই ফেইক একাউন্ট তৈরি করতে পারো যাতে তোমার প্রোডাক্ট ‘জনপ্রিয়’ দেখায়। ঝামেলা হলো লোকে যদি একবার বুজে ফেলে তাহলে খবর আছে।
৩. পেপাল যেমন ই-বের কাস্টোমারদের মধ্যে নিজের প্রথম চাংকটা খুঁজে নিয়েছে সেরকম তুমিও একটা কোন সার্ভিসের সঙ্গে লেগে থাকতে পারো। মেধা, শ্রম সবই সেখানে দাও।
৪. একটা ছোট্ট গ্রুপের জন্য প্রথমে প্রোডাক্টটা লঞ্চ করতে পারো। তারপর গ্রুপ গ্রুপ ধরে আগাতে পারো যতক্ষণ না সেটা ভাইরাল হচ্ছে। ফেসবুক যেমন কেবল শুরুতে হার্বাডের জন্য ছিল- তারপর আমেরিকার কলেজগুরোর জন্য ছাড়া হয়েছে এবং সবশেষ সেটা সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
৫. খুবই কুল কিছু ইভেন্টের আয়োজন করে প্রথমদিককার কাস্টোমারদের ধরতে পারো। মাইস্পেস, ইয়েল্প এবি ইউডেমি একাজটা করেছিল।
৬. তোমার প্রোডাক্ট যদি এমন হয় যে, লোকে সেটার জন্য বসে আছে ঘাপটি মেরে তাহলে তুমি সেটা সরাসরি এপের বাজারে ছেড়ে দিতে পারো। ইনস্টাগ্রামের প্রথম দিনের ডাউনলোড মাত্র ২৫ হাজার!
৭. ইনফ্লুয়েন্সিয়াল এডভাইজার ও ইনভেস্টরদের তাদের চ্যালাচামুন্ডাসহ দাওয়াত দিয়ে একটা ইভেন্ট করতে পারো। ওই ইভেন্টের লক্ষ্য কিন্তু ইনভেস্টরের টাকা বা এডভাইজরের উপদেশ নয়। এর মাধ্যমে ওদের নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু লোককে ডেকে আনা যাদের মাধ্যমে প্রোডাক্টের খবর অল্পকিছু লোকের কাছে পৌঁছানো যায়। এবাউট ডট মি এটা শুরু করেছে এখন অনেকেই এ পথ নিচ্ছে। আমাদের দেশেও এমন কাজ হচ্ছে। বেসিসের অডিটোরিয়ামে ছোট্ট একটা অনুষ্ঠান করে প্রোডাক্ট লঞ্চ করা হচ্ছে।
৮. অ্যামাজনের স্মাইল অ্যামাজনের মতো একটা কিছু করা যেতে পারে।
এরকম সব আউটরিচ প্রোগ্রামের ডিচাইন ও কার্যক্রম খুবই স্পেসিফিক লক্ষ্য নিয়ে করতে হবে। কোনভাবেই ব্যাপারটা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের মতো হবে না। এখানে ফলোআপের ব্যাপারটাই হবে মুখ্য। যতো লিড তৈরি হবে চেষ্টা করতে জবে তাদের কাস্টোমার বানানোর। ব্যাপারটা হবে ট্রয়ের ঘোড়ার মতো। এমনকিছু যা শুরুতে ঠিক মার্কেটিং মনে হবে না কিন্তু এর মাধ্যমে তোমার কোম্পানি পেয়ে যাবে কাঙ্খিত একসেস যাতে তোমার গ্রাহক বাড়বে, সাইন-আপ হবে এবং তুমি আগাতে থাকবে।
পরের পর্ব – পরের পর্ব : গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং (৭ - ১৩)
No comments:
Post a Comment