নরম্যান, ওকলাহোমা: বোলিং খেলার বাংলা কোন নাম আছে কিনা খুঁজে পাই নাই। প্রাচীন মিশরেও নাকি এই খেলার প্রচলন ছিল! বাংলাদেশে এই খেলার তেমন প্রচলন না থাকলেও শখের বশে বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, যমুনা ফিউচার পার্ক কিংবা বেশ কিছু এলাকায় বন্ধু-বান্ধব বা সিনিয়র ভাইরা মাঝেমধ্যে খেলতে যায় বলে শুনি।
আমেরিকায় প্রোফেশনাল ফেলোশিপ প্রোগ্রামের ৩ সপ্তাহে আমরা ১০ দলের দলের ৬ জন বোলিং খেলতে যাওয়ার সুযোগ পাই। আমাদের সঙ্গে প্রফেসর ইলানি আর ইমরান ভাইও ছিল। বাংলাদেশে থাকতে টিভিতে আর দুর থেকে বোলিং খেলা দেখারই অভিজ্ঞতা ছিল, প্রথমবারের মত বল ধরি আমেরিকাতেই। বলের ওজন ৭ থেকে ১১ কেজি হয়, তিনটা ছিদ্র থাকে যা দিয়ে বল ধরতে হয়। বোলিং করার সময় বিশেষ ধরনের জুতা পরতে হয়, নতুবা পিছলে চিটপটাং হওয়ার চান্স থাকে।
আমার যা অভিজ্ঞতা
প্রথমে খুব পার্ট নিয়ে ১১ কেজির এক বল নিয়ে বোলিং স্ট্যান্ডে নিয়ে যাই আমি, বোকার মত বলের ছিদ্রে যে আঙ্গুলই ঢুকে নাই আমার তা খেয়ালই করি নাই। বেখেয়ালের কারণে প্রফেসর ইলানি, বার্মিজ বন্ধু সু-এর পরে আমার পালা আসলে, আমি দুবার ৯.৮১ মিটার/বর্গ সেকেন্ডে বল শূণ্যে ছুড়ে মারি আমি। বল ছোড়ার সময় আমার লক্ষ্য ছিল সামনের প্লাস্টিকের বোতলগুলোর দিকে। বল ধরা কিংবা বল ছোড়ার দিকেই কোন মন ছিল না, আর এতেই প্রথম দু শটে শূন্য পয়েন্ট পাই আমি। এরপরে ৯ রাউন্ড মিলিয়ে আমি ৬০ এর মত স্কোর করি, যেখানে ৩ জন ১০০+, আর ২ জন প্রায় ৮০+ স্কোর করে। পরের রাউন্ডে আমি মোটামুটি খেলা বোঝার চেষ্টা করি, আর এতে অন্যরা খারাপ করার কারনে আমি ৩য় স্থানে চলে আসি। আর ৩য় রাউন্ডে আমার স্কোর ১০০+ হয়, পঞ্চম রাউন্ডে আমরা পুরো খেলা শেষ করতে পারি নাই। এই রাউন্ডে আমি কয়েকবার এক চান্সেই সব বোতল ফেলে দিয়েছিলাম।
বোলিং থেকে যা শিখলাম
বোলিং খেলায়, বোতলকে A, বলকে B, আমাকে C, বোলিং পাথকে D, বল ছোড়ার জায়গাকে E আর চারপাশের পরিবেশকে G, লক্ষ্যভেদকে H ধরে একটা অংক করা যায়।
H=A/B+(C*D*E)+G
এখানে লক্ষ্যভেদ করার আগে বোতল, বল, বোলিং পাথ, চারপাশের পরিবেশ আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণে মন দেয়া জরুরী।
১. কোন কাজ করার সময় সামনের লক্ষ্যের দিকে শুধু নজর দিলে বিপদে পড়ার চান্স থাকে। আমি শুধু বোতলের দিকে তাকানোয় ব্যস্ত ছিলাম, আর এতেই বল ধরা কিংবা বল ছোড়ার কৌশলই জানতাম না আমি। শুধু A কে B দিয়ে আঘাত করলে H এর মান শূন্য হবে। সাবধান।
২. বলের ওজন, বলের ছিদ্র, বলকে ধরার কৌশল জানলে বল ছোড়ার সময় কাজে দেয়। B এর উপর নির্ভর করে আপনি H স্কোর কত করবেন, B না জানলে বিপদে পড়বেন।
৩. বল ছোড়ার জায়গা E সম্পর্কে জানা বেশ জরুরী। বল ছোড়ার সময় রানআপ, কোন পা আগে, কখন নিতে হবে তা ঠিক করে নেয়া জরুরী। নইলে আমার মত প্রথম বারেই বোলিং পাথেই পা রাখবেন।
৪. C, নিজের সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে নিজে কতটুকু ওজন নিতে পারবো, কতটুকু জোরে ছুড়তে পারবো তা জেনে নিতে হবে।
—
আমি যা বুঝলাম, আমি সাফল্য (বোতল)-কে আপনার কাজ (বল) দিয়ে আঘাত করবেন। যার আগে স্ট্র্যাটেজি (বল ধরা, বল ছোড়া, রানিং স্ট্র্যাটেজি, পরিবেশ) সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
বোতলের ওজন, মাত্রার উপরে সাফল্য মানে স্কোর নির্ভর করে না। যা দেখলাম, বল ছোড়ার কৌশল আর বল ছোড়ার আগের প্রস্তুতিই বলে দেয় আপনি কতটা স্কোর করবেন!
(মার্কিন মুল্লুকে প্রোফেশনাল প্রোগ্রামে যা শিখলাম-বুঝলাম তার ইনফর্মাল হাউকাউ নিয়েই মার্কিন মুল্লুকে এক উল্লুকের দিনলিপি সিরিজ লেখা শুরু করেছি। পড়া শেষে ইগনোর করার অনুরোধ করছি।)
No comments:
Post a Comment