Pages

Saturday, January 12, 2019

ব্র্যান্ড বিল্ডিং – Slowly but Surely

আপনার বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে আড্ডাবাজ কে ছিল, একটু মনে করে দেখুন তো? আর সবচেয়ে দুরন্ত? সব থেকে মজার? আর সবচেয়ে শান্তশিষ্টই বা কে ছিল? মনে করতে পারছেন? হুমম, পারারই কথা। আসলে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব কিংবা পরিচয় একজন সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে এবং বুঝতে অনেক সাহায্য করে আর তাকে তখন সহজেই ‘লোকটা খুবই মজার’ কিংবা ‘লোকটা একটু পাগল টাইপ’ – এরকম এক কথায় বা এক বাক্যে অন্যের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়া যায়। ঠিক তেমনি, ব্র্যান্ডের ব্যাপারটাও কিন্তু অনেকটা একই। টয়োটা গাড়ী শুনলেই আমাদের মাথায় কাজ করে এটার মেইন্টেনেনস খরচ অনেক কম, লেক্সাস-এর নাম শুনলেই মনে হয় ব্যয়বহুল গাড়ী, বিবিসি-র কথা শুনলে মনে হয় খবরটা নির্ভরযোগ্য। কোকাকোলা, টয়োটা, অ্যাপল এবং আরো যত নামীদামী ব্র্যান্ড- এরা কি একদিনে এই সাফল্য অর্জন করেছে? নিশ্চয়ই নয়। ব্র্যান্ড বিল্ডিং হুটহাট করে হয় না, ব্র্যান্ডের পরিচিতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে কাস্টমার বন্ডিং-এর জায়গাটা তৈরী হয়।
ধরুন, আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, কোনো এক সুন্দরীর প্রেমে পড়ে গেলেন। (ইচ্ছে করে ‘সুন্দরী’ কথা বললাম, কেননা বেশিরভাগ ছেলেই সুন্দরী মেয়েদেরই প্রেমে পড়ে। আপনার প্রডাক্টের ব্যাপারটাও তাই, দেখতে আকর্ষনীয় হলে ভেতরে কি আছে না জেনেই অনেকে পছন্দ করে ফেলবে।) এখন প্রেমে যেহেতু পড়েছেন, আপনি কি করবেন? আপনি তখন স্বাভাবিকভাবেই তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করবেন, আপনি তাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করবেন। আপনি হয়তো আগের চাইতে পরিপাটি হয়ে, চুলে জেল দিয়ে, মান্জা মেরে সেই মেয়ের আশেপাশে ঘুরঘুর করবেন, তার নজরে পড়ার চেষ্টা করবেন। যেকোনো ব্র্যান্ড-এর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তাই – অ্যাডের মাধ্যমে টার্গেট কাস্টমারদের নজরে পড়ার চেষ্টা করাটাই হলো প্রথম ধাপ।
প্রথম ধাপ যদি হয় ‘নিজের উপস্থিতি জানান দেয়া’, তবে দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে ‘প্রাসঙ্গিকতা’ অর্থাৎ এটা কি আমার আদৌ দরকার কি না, সেটা বিচার করা। আপনি তো পরিপাটি হয়ে সেই মেয়ের আশেপাশে ঘুরঘুর করলেন, কিন্তু সেই মেয়ের যদি অলরেডি বয়ফ্রেন্ড থেকে থাকে, তাহলে তো আপনার চান্স শুন্যের কোঠায়! অর্থাৎ, সে অলরেডি অন্য একটা ব্র্যান্ডের প্রতি loyal, কাজেই সেই ব্র্যান্ডের কোনো খুঁত না পেলে (সেই বয়ফ্রেন্ডের সাথে বড় কোনো ঝামেলা না হলে) এবং আপনার ব্র্যান্ডের বাড়তি যোগ্যতা (অর্থাৎ, আপনার বাড়তি কোনো আকর্ষনীয় গুন না থাকলে) ‘প্রাসঙ্গিকতা’ শুরুতেই মাঠে মারা যাবে। আর যদি তার বয়ফ্রেন্ড না থেকে থাকে, তাহলেও যে ব্যাপারটা খুব সহজ তা তো ভালোই বুঝতে পারছেন, কম্পিটিটরের তো আর অভাব নেই, আপনার মত অনেকেই যার যা আছে তা নিয়ে চেষ্টা করে যাবে সেই মেয়েকে বাগানোর জন্য। আপনার পকেট যদি ছোট হয় (অর্থাৎ, মার্কেটিং-এর বাজেট যদি কম থাকে), তাহলে তো আপনি শুরুতেই পিছিয়ে গেলেন।
প্রাসঙ্গিকতা-র পরের ধাপ হচ্ছে পারফরম্যান্স। ধরা যাক, আপনি দ্বিতীয় ধাপে সফল হয়েছেন অর্থাৎ মেয়েটি আপনার সাথে কথা বলা শুরু করেছে – পরিচয় থেকে ব্যাপারটা বন্ধুত্বে এসে ঠেকেছে। এখন বন্ধুত্ব থেকে ব্যাপারটাকে প্রনয় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব কিন্তু আপনার। আপনি একাই কিন্তু তার বন্ধু নন, আরো অন্যান্য বন্ধুরাও কিন্তু বিভিন্নভাবে তার মন জয় করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আপনার স্বভাব-চরিত্র, আপনার গুনাবলী, আপনার আস্থা অর্জনের ক্ষমতা – এসবই বলে দিবে আপনি তার মন জয় করতে পারবেন কি না, সম্পর্কটা দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না। আপনার প্রডাক্ট কিংবা সার্ভিসের পারফরম্যান্সের ওপরই নির্ভর করবে কাস্টমার সেটা বারবার কিনবে কি না। অর্থাৎ, বাড়তি কিছু একটা থাকতে হবে যা আপনাকে (কিংবা আপনার প্রডাক্টকে) অন্যদের (কিংবা অন্যগুলো) থেকে আলাদা করে চেনাতে পারে।
একটা ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকা দরকার: over promise. অনেক সময়ই অনেক বিজ্ঞাপন এতই অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয় যে পরে সেটাকে বাটপারি বা শঠতা বলে মনে হয়। প্রেমের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। নিজেকে জাহির করার জন্যে অনেক সময় নিজের সম্পর্কে কিংবা পরিবার সম্পর্কে অনেক বাড়তি কথা বলে পরে শেষমেষ ধরা খেতে হয়। আসলে যে যেটা, সেটাই ঠিকভাবে উপস্থাপন করার জরুরি। কোনো কিছু লুকালে একদিন না একদিন ধরা পড়তেই হয়, আর তখন আম আর ছালা দুটোই হাতছাড়া হয়।
সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে বন্ডিং ক্রিয়েট করা, অর্থাৎ কাস্টমার যেন মনে করে ‘nothing else can beat it’. বিয়েটা যেমন প্রণয়ের পরের ধাপ, তেমনি একজন কাস্টমারকে পাকাপাকিভাবে আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি অনুগত করে তোলাটাও ব্র্যান্ড বিল্ডিং-এর সর্বশেষ ধাপ। তবে বিয়ে মানেই কিন্তু কাজ শেষ নয়। বিয়ের পরের সম্পর্কটা ঠিকঠাক বজায় রাখা যেমন কঠিন কাজ, তেমনি রেগুলার কাস্টমারের দিকে খেয়াল রাখাও খুবই জরুরি। লয়াল কাস্টমার যদি আশাহত হয়, তাহলে আপনার ব্র্যান্ডের রেপুটেশনেরও বারোটা বেজে যেতে পারে।
কাজেই, ব্র্যান্ড বিল্ডিং এর ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হচ্ছে: ধাপে ধাপে এগোন – slowly but surely.

তেল কম, ভাজা চাই মচমচা ! স্টার্টআপের জন্যে নূন্যতম বাজেটের মার্কেটিং টিপস

অনেকেই ইতোমধ্যে ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন। অন্যান্য সেক্টরে খরচাপাতি করে শেষ পর্যন্ত দেখা গেল মার্কেটিংয়ের জন্যে খুব একটা বাজেট নাই। কিন্তু ব্যবসার স্বার্থে, ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্যে কিছু ঢাকঢোলতো পিটাতেই হবে। কম তেলে মচমচে ভাজা চাইলে অবশ্যই কিছু কৌশলের আশ্রয় নিতে হবে। নিজেকে ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র। শুরুতেই হয়ত নিউজ পেপার এড, লিফলেট, ফ্ল্যায়ার, পোষ্টার, ব্যানার তৈরী করে অনেক খরচ করেও কাঙ্খিত ফলাফলের মুখ দেখতে পাবেন না। এখনকার সময়ে কৌশলী না হলে আর গতানুগতি মডেল থেকে বাইরে আসতে না পারলে সফলতার গতি ধীর হয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক। আপাতত কিছু কৌশলগুলো জানতে এবং প্রয়োগ করতে ফলো করতে পারেন আমার টিপসগুলো –
০১) ব্যবসার শুরুতেই একটা লঞ্চিং প্রোগ্রাম করেন। এটা হতে পারে আপনার অফিসে বা কোন রোস্তোরায়। এই প্রোগ্রামে এমন লোকজনকে দাওয়াত করুন যারা আপনার ব্যবসায় পরবর্তীতে কাজে লাগবে। অবশ্যই রাখবেন ২/৩ জন সাংবাদিক বন্ধু বান্ধব। বুফে আইটেমের ব্যবস্থা করুন। অথবা সন্ধ্যায় চা নাস্তা। ২০ জন নিয়ে যদি প্রোগ্রাম হয় তাহলে আপনি মোটামুটি ১০ হাজার টাকায় সেরে ফেলতে পারবেন।
০২) প্রোগ্রামে অবশ্যই একটা বিজসেন প্রেজেন্টেশন রাখবেন। খাওয়া দাওয়ার শুরুতেই প্রেজেন্টেশনটা দিয়ে দেয়া জরুরী।
০৩) প্রোগ্রামে আসা অতীথিদের ছোটখাট কিছু উপহার দিতে পারেন। তা হতে পারে, কার্ড হোল্ডার, চাবির রিং অথবা টি-শার্ট। এগুলো গতানুগতিক উপহার সামগ্রী। চেষ্টা করুন আউট অব দ্যা বক্স কিছু দিতে এতে করে সে আপনাকে মনে রাখবে দীর্ঘদিন। সাথে অবশ্যই আপনার কোম্পানির ভিজিটিং কার্ড, ব্রশিউর ইত্যাদি দিতে ভুলবেন না।
০৪) প্রোগ্রাম শেষে একটা প্রেস রিলিজ তৈরী করুন। টার্গেট করুন অনলাইন মিডিয়াগুলোকে। এগুলোতে প্রেস রিলিজ পাবলিশ করানো সহজ।
০৫) আপনার প্রোগ্রামে আসা সাংবাদিকদের সাথে পরবর্তী দিনে একটু হাই হ্যালো করুন যেন আপনার নিউজটি পত্রিকায় আসে। পত্রিকায় এলে তাদের ধন্যবাদ জানাতে ভুলবেন না।
০৬) আপনার ব্যবসা শুরুর গল্প থেকে ধরে নিয়মিত সকল বিষয়েই ব্লগিং করুন। প্রোগ্রামের খবর, প্রেস রিলিজ ছাপা হলে তার লিংক, নতুন প্রোডাক্ট ও সার্ভিসের খবর সব কিছুই নিয়মিত ব্লগে পাবলিশ করুন।
০৭) আপনার ফেসবুক প্রোফাইলেও অনুরূপ একটি ভিটিস চালু রাখুন।
০৮) ব্যবসার শুরুতে একটি ফেসবুক পেইজতো খুলবেনই। সেখানেও অনুরূপ একটি ভিটিস চালু রাখুন। ফেসবুক পেইজটি সদা পরিচ্ছন্ন, তথ্য নির্ভর এবং আপডেট রাখুন।
০৯) প্রতিদিন ফেসবুক পেইজে এবং ই-মেইলে আসা কুয়েরিগুলোকে সিরিয়াসলি নিয়ে রিপ্লাই দিতে চেষ্টা করুন। প্রতিটা রিপ্লাইয়ের সাথে আপনার লগো, আইডেন্টেটি ইত্যাদি সংযুক্ত করে দিতে ভুলবেন না।
১০) বিক্রয়.কম, সেলবাজার.কম এ বিজ্ঞাপন দিন। নিয়মিত বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে বিজ্ঞাপন পাবলিশ করুন। নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনও এই সাইটগুলোতে দিতে পারেন। বিজ্ঞাপন দিতে পারেন বিডিজবস.কম বা প্রথম আলো.কমেও।
১১) ই-কমার্স সাইটগুলোর মাধ্যমে আপনার পণ্য ও সেবা বিক্রির চেষ্টা করুন। বিজ্ঞাপন দিতে পারেন তাদের সাইটেও। সাইটগুলোর সাথে জয়েন্ট প্রমোশনার একটি ভিটিসও চালু করতে পারেন। সুযোগ নিন ডিল সাইটের মাধ্যমেও।
১২) আপনার বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে যাদের ফেসবুক ফ্যানপেইজ আছে তাদের সবার সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে তাদের ফ্যানপেইজের মাধ্যমে প্রমোশন চালান। যাদের ওয়েব সাইট আছে এবং সাইটে মোটামুটি ট্রাফিক আছে তাদের সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চেষ্টা করুন। বিনিময়ে টাকা নয় অন্য কোন সেবার বিনিময়ে একটা উইন-উইন সিচুয়েশন ক্রিয়েট করুন।
১৩) কিছু বাল্ক এসএমএস কিনে নিন। আপনার ২০ জন বন্ধুর সবার মোবাইল থেকে সব নাম্বার সংগ্রহ করুন। সেই নাম্বারগুলোতে এসএমএস পাঠান। টার্গেট ক্লায়েন্টের ডেটাবেস থাকলে তাদেরও নিয়মিত এসএমএস পাঠান।
১৪) এসএমএসের মত করে ই-মেইল আইডি সংগ্রহ করে ই-মেইল করুন। নিয়মিত আপনার সেবা সর্ম্পকে সবাইকে আপডেট জানান।
১৫) স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশীপ বাড়ান। বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে তাদের বিভিন্ন কর্মসূচীকে আপনার প্রমোশনের জন্যে ব্যবহার করুন। বিভিন্ন মেলায় নিজেদের শোকেসিং করুন।
১৬) বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে মূল্যছাড়, প্রতিযোগিতা ইত্যাদির আয়োজন করুন। বিভিন্ন বড় কোম্পানির সাথে জয়েন্ট প্রমোশনের চেষ্টা করুন।
১৭) কমিউনিকেশন, নেটওয়ার্ক আর কানেকটিভিটি বাড়ান। যেখানেই যাননা কেন আপনার ব্যবসায়িক পরিচয় দিতে দ্বিধা বোধ করবেন না। সব যায়গায় একটা উইন-উইন মডেল ডেভলপ করতে চেষ্টা করুন।
১৮) কোন ক্লায়েন্টের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করার নামে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়াবেন না। স্মার্টলি ক্লায়েন্টের রিকোয়ারমেন্ট শুনুন। তাকে একটা ভাল সাজেশন দিন। তাকে ভাবতে দিন। এবার নিজেকে প্রেজেন্ট করুন যে, আপনি চাইলে এই কাজগুলো আমি করে দিতে পারব। আপনার অফার আপনি তাকে দিয়ে দিন। এবং সিদ্ধান্ত নিতে সময় দিন।
১৯) ক্লায়েন্টের সাথে ব্যবসার বাইরেও কিছু রিলেশন তৈরী করুন। এক্সটা মাইল হাঁটার অভ্যাস করুন। সব সময় কিছু এক্সট্রা দিতে চেষ্টা করুন। মানুষ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পেলে নির্ভরশীল হয়ে পরে। আর তার নির্ভরশীলতাই আপনার ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
২০) কোয়ালিটি, প্রাইস, সার্ভিস, কমিটমেন্ট আর রিলেশনশীপ এই পাঁচটি বিষয়ে কোন কম্প্রোমাইজ করবেন না। ক্লায়েন্টের ডিমান্ড অনুযায়ী উপরিউক্ত বিষয়গুলোর উপর সদা নজর দিতে চেষ্টা করুন।


সময় নাকি টাকা? কিভাবে সফলেরা সিদ্ধান্ত নেন?

ব্যবসা করতে গেলে প্রায়শই একই সাথে চলে এমন দুই বা ততোধিক সমস্যার সামনে পড়তে হয়, যেখানে একটাকে ধরলে অন্যটাকে ছাড়তে হবে। আপনার ব্যবসার একটি সমস্যার সমাধানের জন্য আপনি সময় ব্যায় করবেন নাকি টাকা ব্যায় করবেন?
ধরেন আপনি সদ্য বিয়ে করেছেন। আপনি এবং আপনার সঙ্গী একজন আরেকজনকে বুঝতে চেষ্টা করেন, একে অপরকে সাহায্য করতে চেষ্টা করেন। আপনাদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। ফলাফল স্বরূপ ঘর ঝাড়ু দেওয়া থেকে নিজেদের রান্নার কাজ, কাপড় ধোয়ার কাজটাও নিজ হাতেই ভাগাভাগি করে করতে হয়। একজন কাজে সাহায্যকারী রাখার মত সামর্থ হয়ত আপনার নাই।
এবার চিন্তা করেন আরও পাঁচ বছরের পরের কথা, হয়ত আপনি এখন আপনার ব্যবসাকে দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন, আপনার সঙ্গীও ভালো কিছু একটা করছে। এখন কিন্তু সেই একই ঘর ঝাড়ু দেওয়ার কাজের জন্য আপনি কাজে সাহায্যকারী কাউকে রাখবার কথা চিন্তা করবেন। কারণ ৩০ মিনিট আপনার সঙ্গীর সাথে ভালো সময় কাটানোটা কাউকে কিছু টাকা খরচ করে কাজ করিয়ে নেওয়ার থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যবসাতেও ঠিক একই রকম অবস্থা আসে। শুরুতে হয়ত আপনাকেই আপনার প্রতিষ্ঠানের অনেক কাজ করতে হচ্ছে, হয়ত অফিস রুম মোছার মত কাজটিও করতে হচ্ছে। হয়ত ব্যবসা দাঁড় করাতে গিয়ে আপনার দিন রাত এর পিছনেই ব্যয় করতে হচ্ছে।
কিন্তু আপনার ব্যবসা যখন উন্নতির মুখ দেখবে, তখন কি হবে? আপনি হয়ত কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছেন ঠিক যে কাজটি আপনি করতেন তার জন্য। কেন? কারণ সহজ, আপনার হয়ত এখন সামর্থ্য আছে, হয়ত আপনি বুঝতে পারছেন যে কাজটি অন্যকে দিয়ে করিয়ে নিলে আপনার যা ব্যয় হবে, তার থেকে আয়টা বেশীই হবে।
আপনি যাই করেন না কেন, আপনাকে ভেবে  চিন্তা করতে হবে। যখনই আপনি অন্য কাউকে কাজে খাটাচ্ছেন, আপনাকে এর ‘অপারচ্যুনিটি কষ্ট’ হিসাব করতে হবে। একটি উদাহরণ টানি, আপনি একটি কাজ দু’জন কর্মী দ্বারা করিয়ে নিতে পারছেন। তাদের বেতন মাসে ১০ হাজার করে মোট ২০ হাজার টাকা। এখন তাদের করা কাজের ফলে আপনার ইনকাম ৫০ হাজার টাকা। আপনি হয়ত একটি ম্যাশিন কিনতে পারেন, যেখানে একজন লোক কম লাগবে, সাথে কাজ হবে দ্রুত এবং মাসে আরও বেশী পণ্য তৈরী করতে পারবেন। হিসাব করেন, যদি আপনার বিক্রয়ের সম্ভাবনা ঐ ৫০হাজার থেকে না বাড়ে, আর ম্যাশিনের পিছনেই মাসে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়, আপনি কি এই দিকে পা বাড়াবেন? কারণ খরচ তখন দাড়াবে ৩০হাজার, কিন্তু বিক্রি সেই ৫০হাজারই। আবার যদি বিক্রি ৭০ হাজার হয়ে যায়, আপনি কিন্তু এ দিকে আসতে চাইতেই পারেন।
‘অপারচ্যুনিটি কষ্ট’ এমন না যেটা আপনি আপনার সময়ের বিপরিতে আর একজন থেকে পাবেনই। এটা একটি মূল্যমান যা হয়ত আপনি আপনার করা কোন কাজ দিয়ে পেতে পারতেন। আপনি ব্যবসা করবেন, নাকি চাকরী করবেন? আপনি ব্যবসা করলে কোন ব্যবসাটি করবেন? কোন ব্যবসায় টাকা ইনভেষ্ট করলে আপনার উন্নতির সম্ভাবনা বেশী? মাথায় রাখতে হবে, আপনি একটি সুযোগ গ্রহণ করার কারণে সব সময়ই অন্য একটি সুযোগ হারান। হয়ত অফিসের কম্পিউটারের জন্য একটি ভাল মনিটর কিনতে গিয়ে একটি ভালো প্রিন্টার কিনতে পারেন না, আবার হয়ত একটি ভালো প্রিন্টারের জন্য একটি ভালো মনিটর কিনতে পারেন না। আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোনটিতে টাকা ঢালবেন। যদি প্রিন্টিং গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে মনিটরে যে টাকা খরচ করবেন, তা আসলে “নষ্ট” হবে। আবার যদি মনিটরটি বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে প্রিন্টারে খরচ করা বোকামী হবে।
আপনার হিসাব আপনাকে করতে হবে, আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজের হিসাব আপনাকেই  ঠিক করতে হবে। আপনার প্রতিষ্ঠানের অফিসের স্থান হয়ত গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবুও ভালো শোনাবে চিন্তা করে মিরপুর ছেড়ে গুলশানে অফিস নিলেন, যেখানে ভাড়া ৩০হাজার টাকা বেশী। কিন্তু আপনি চাইলেই এই ৩০হাজার টাকা খরচ করে মিরপুরে থেকে আর একজন দক্ষ কর্মীকে নিয়োগ দিতে পারতেন।
বিলগেটস সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত আছে, তাঁর হাত থেকে কলম পড়ে গেলে তিনি ঐ কলম আর তুলেন না; কারণ কলমটি তুলতে যে সময় লাগবে তার থেকে বেশী টাকা তিনি ঐ সময়েই আয় করছেন। কথাটি বাস্তব বা অবাস্তব যাই হোক, কথাটির পিছনে কিন্তু যুক্তি আছে।  আবার দেখেন, সেই বিল গেটসই কিন্তু প্রচুর সময় ব্যায় করছেন বই পড়তে কিংবা বিভিন্ন স্থানে ইন্টারভিউ দিতে।
আপনার সময় এবং টাকা একান্তই আপনার। কিভাবে খরচ করবেন, কিভাবে চালাবেন, সেটা আপনিই সিদ্ধান্ত নিবেন। কিন্তু এখানে আপনাকে বিচক্ষণ হতে হবে, হতে হবে দুর্দান্ত হিসাবী।


নিজের জন্যে সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে নিজেকেই

টুইটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিজ স্টোন। তাঁর জন্ম ১৯৭৪ সালের ১০ মার্চ, যুক্তরাষ্ট্রে। ১৪ মে, ২০১১ সালে ব্যবসন কলেজের সমাবর্তনে তিনি এ বক্তব্য দেন।
আজকে এখানে আসতে পেরে আমি খুব সম্মানিত বোধ করছি। গ্র্যাজুয়েটদের অনেক অভিনন্দন। তোমরা নিঃসন্দেহে বিশেষ কিছু অর্জন করেছ এবং তোমাদের যাত্রা মোটে শুরু হলো। যখন আমি ছোট্ট শিশু, তখন আমার মাকে বলেছিলাম, আমি বড় হয়ে ব্যবসনে একজন ব্যবসায়ী হতে যাব। কিছুটা অবিশ্বাস্যভাবেই আমি এখন এখানে দাঁড়িয়ে আছি তোমাদের সঙ্গে। এখানে আসার জন্য আমি আমার একান্ত নিজস্ব পথ বেছে নিয়েছিলাম। আজকে আমি তোমাদের সঙ্গে সুযোগ, সৃজনশীলতা, ব্যর্থতা ও সহানুভূতি সম্পর্কে চারটা গল্প বলব। এ গল্পগুলোর অন্তর্গত বোধ আমার ব্যবসা, আনন্দ এবং সাফল্যের দৃষ্টিভঙ্গিকে রঙিন করে তুলেছে।
প্রথম গল্পের বিষয়, সুযোগ:
আমার বয়স যখন ছয় থেকে দশ, তখন মা আমাকে বয় রেঞ্জার নামে একটা কর্মসূচিতে দিল। এটা বয়স্কাউটের পূর্ববর্তী পর্যায়। স্থানীয় মার্কিন আদিবাসীরা আমাদের আদর্শ ছিল। সেখানে আমরা এক ধরনের পুঁতি ও পালক দিয়ে মাথার মুকুট তৈরি করতাম। দড়িতে গিঁট দেওয়াসহ বিভিন্ন শারীরিক কৌশলও আমরা শিখেছিলাম। এসব করে আমার সময়ই হতো না সমবয়সীদের সঙ্গে বেসবল, ফুটবল, বাস্কেটবল ইত্যাদি খেলায় অংশ নেওয়ার। হাইস্কুলে উঠে আমি আমাদের ক্রীড়া দলে যোগ দিতে চাইলাম। কিন্তু বাস্কেটবল কোর্টের সব লাইন দেখে অবিশ্বাস্য রকমের আতঙ্কিত হতাম। খেলার নিয়মকানুনও বেশ কঠিন লাগত, যদিও সবার কাছে সেসব ছিল খুবই সহজ। আমার এই আতঙ্কের কারণে আমি কোনো দলেই সুযোগ পেলাম না। সে সময় আমি নিজেই এক ধরনের গবেষণা শুরু করলাম। দেখলাম, ‘ল্যাক্রোস’ নামের খেলাটা আমাদের স্কুলে খেলা হয় না। যদি কেউই খেলতে না জানে, তবে আমার মতো সবারই অসহায় অবস্থা হবে। তাই স্কুল প্রশাসনের কাছে গিয়ে বললাম, যদি কোচ ও শিক্ষার্থী জোগাড় করতে পারি, তবে কি আমি ল্যাক্রোস টিম শুরু করতে পারি? তারা রাজি হলো। ল্যাক্রোস টিম যাত্রা শুরু করল। যখন আমার আতঙ্ক কেটে গেল, তখন দেখা গেল এই খেলায় আমি খুবই ভালো করছি এবং একসময় আমি দলের অধিনায়ক হয়ে গেছি। এ অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে কী করে সুযোগ তৈরি করে নেওয়া যায়। কোনো কাজ করার জন্য যে সঠিক পরিস্থিতির দরকার, তার জন্য অপেক্ষা না করে তুমি নিজেই সেই পরিস্থিতি তৈরি করে নিতে পারো।
সৃজনশীলতার গল্প:
হাইস্কুল শেষে কলেজে আমি শিল্পকলা বিষয়ে পড়তে লাগলাম। পাশাপাশি বেকন হিলের এক প্রকাশনা সংস্থায় একটা চাকরিও পেয়ে গেলাম। একদিন যখন পুরো আর্ট ডিপার্টমেন্ট দুপুরের খাবার খেতে বাইরে গেছে, তখন কম্পিউটারে আমি একটা বইয়ের প্রচ্ছদ ডিজাইন করে ফেললাম। অন্য প্রচ্ছদগুলোর সঙ্গে সেটাও অনুমোদন করার জন্য রেখে দিলাম। শিল্প পরিচালক নিউইয়র্ক থেকে ফিরলেন। প্রচ্ছদগুলো দেখার সময় আমারটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কে করেছে? আমি জানালাম যে এটা আমার করা। তিনি ভীষণ অবাক হলেন। শুধু যে আমার প্রচ্ছদটাই নির্বাচিত হলো তা না, আমাকে বইয়ের প্রচ্ছদ পরিকল্পনার চাকরির প্রস্তাব করা হলো। একজন বিশিষ্ট মানুষের সঙ্গে কাজ করতে পারার দারুণ সুযোগ পেয়ে গেলাম। তাই আমি একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম — কলেজ ছেড়ে কাজ শেখার এই দুর্লভ সুযোগকে কাজে লাগালাম। এভাবেই আমার গ্রাফিক ডিজাইন শেখা শুরু। এ শেখাটাই আমাকে নতুন ধরনের চিন্তার জগতে নিয়ে এল। কখনো ভেবো না, তোমার মধ্যে সৃষ্টিশীলতা নেই। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই এ সম্পদটা আছে।
আমার তৃতীয় গল্পের বিষয় ব্যর্থতা:
১৯৮৭ সালে একটা জার্মান রোমান্টিক ফ্যান্টাসি সিনেমা দেখেছিলাম। নির্দেশক ছিলেন উইম ওয়েনডার্স। এই সিনেমার আমেরিকান ভার্সনটা হলো উইংস অব ডিজায়ার। কাহিনির সময়টা ১৯৮০-র দশক, যখন পশ্চিম বার্লিনে গৃহযুদ্ধ প্রায় শেষ। দুজন দেবদূতকে (ক্যাসেল ও ড্যামিয়েল) রাখা হয়েছে বার্লিন শহরের দিকে খেয়াল রাখার জন্য। মানুষজন ও শহর গড়ে ওঠার আগে থেকেই তারা সেখানে ছিল। তাদের মৃত্যু নেই। সেখানকার জনগণের চিন্তাভাবনা বোঝা, কথা শোনা এসবই ছিল তাদের কাজ। কিন্তু তারা বাস্তবজগতে ছিল অদৃশ্য, কেউ তাদের দেখতে পেত না বা তাদের কথাও শুনতে পেত না। সবকিছুই তো আর পরিকল্পনামতো চলে না। একসময় ড্যামিয়েল এক প্রতিভাসম্পন্ন, সুদর্শনা সার্কাস আর্টিস্ট ম্যারিওনকে ভালোবেসে ফেলে। তার চিন্তায় বারবার আনাগোনা করতে থাকে মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার অনুভূতি কেমন হতে পারে। একদিন অবিশ্বাস্য একটা কাজ করে ফেলে সে। তার অসীম অমর জীবন ত্যাগ করে একা পৃথিবীতে চলে আসে। বহু ত্যাগ স্বীকারের পর ম্যারিওনকে পায়। আমার তৃতীয় উপদেশ অনেকটা ড্যামিয়েলের সিদ্ধান্তের মতো। কোনো আকর্ষণীয় সাফল্য অর্জনের জন্য তোমাকে অবশ্যই তৈরি থাকতে হবে আকর্ষণীয় কোনো ব্যর্থতার জন্য। লক্ষ্য অর্জনে মৃত্যুর জন্য হাসিমুখে প্রস্তুত থাকতে হবে। আমি বলছি না তোমাদের সত্যিই মরতে হবে। আমার কথার মানে হলো, ব্যর্থতাকে সহজভাবে মেনে নিতে হবে।
সহানুভূতি: আমার চতুর্থ গল্প
মানুষকে বুঝতে পারা ও তার অনুভূতিগুলো ভাগ করে নেওয়াই হলো সহানুভূতি। আমাদের প্রায় সবার মধ্যেই এই গুণটা থাকলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ কীভাবে হতে পারে তা আমরা অনেকেই জানি না। ১০ বছর ধরে আমি বড় পরিসরে সামাজিক যোগাযোগ প্রসারের পরিকল্পনা করছি। যেমনটা হচ্ছে এখনকার সময়ে টুইটার। নিজে বিত্তশালী হওয়ার পরে অন্যকে সাহায্য করতে হবে — এমনটা ভাবা ঠিক নয়। ডোনার চুজ সংস্থার মাধ্যমে আমি ও আমার স্ত্রী বেশ অনেক বছর ধরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাহায্য করে আসছি। এর মূল্য যদিও অনেক কম, তবে প্রতিদান অনেক বেশি। আমরা ছোট্ট শিশুদের হাতে লেখা ধন্যবাদসূচক প্রচুর চিঠি পাই। এগুলো সত্যিই অনেক মূল্যবান।
পৃথিবীতে সবাই আমরা একসঙ্গে থাকি, একজন অন্যজনের ওপর নির্ভর করি। যখন আমরা একে অপরকে সাহায্য করি, পরোক্ষভাবে নিজেদেরই সাহায্য করা হয়। তাই আমার সর্বশেষ উপদেশ হলো, তুমি যত তাড়াতাড়ি অন্যদের প্রতি তোমার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া শুরু করবে, তুমি তোমার জীবনে তত বেশি এর প্রতিদান পাবে।
সবশেষে আমি তোমাদের প্রত্যেককে বলছি, তোমরা নিজেরা নিজেদের সুযোগ তৈরি করো, তোমাদের ভেতরকার অসীম সৃজনশীলতাকে জাগিয়ে তোলো, ব্যর্থতাকে সহজভাবে গ্রহণ করো এবং সহানুভূতিশীল হও। নিজেকে জ্ঞান ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের গুণে গড়ে তোলো। এতে তুমি শুধু পৃথিবীকেই বদলাবে না, তুমি নিজেও আনন্দ পাবে এবং থাকবে প্রশান্তিতে। আমি তোমাদের জন্য গর্বিত। ধন্যবাদ।
সূত্র:  দৈনিক প্রথম আলো
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মারুফা ইসহাক


Thursday, January 10, 2019

এনার্জী ভ্যাম্পায়ার

আমাদের জীবনে সাফল্য লাভের পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা কে বা কি? জানেন? আমরা নিজেরাই আমাদের জন্যে একমাত্র প্রতিবন্ধকতা। হয়তো বিশ্বাস হবে না, আপনি মানতে চাইবেন না কিন্তু এটাই ধ্রুব সত্য। আপনার মাইন্ডসেট বদলান। সঙ্গ, পরিবেশ বদলান, দেখবেন পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে।
আমরা অবচেতন ভাবেই সবচেয়ে বড় যে ভুলটা করি তা হলো - চারপাশ থেকে "এনার্জী ভ্যাম্পায়ার"দের আমরা আমাদের জীবনে একসেস দেই। তারা নানান কায়দা কৌশলে আমাদের মানসিক এনার্জী, প্রোডাক্টিভ টাইম ইত্যাদি চুষে নিয়ে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত দূর্বল করে দিতে থাকে। নানান পারিপার্শ্বিক কারনে হয়তো এদেরকে কিছুটা একসেস দিয়ে দিচ্ছি কিন্তু এমন তো নয় যে, এদেরকে লাইফে রাখতেই হবে?


জীবনে সাফল্য চাইলে, শান্তি চাইলে আজই আপনার উপরে প্রভাব বিস্তার করে আছে এমন ভ্যাম্পায়ারদের তালিকা করুন। যাদেরকে ডিলিট করা সম্ভব স্রেফ ডিলিট করে দিন। যাদেরকে সম্ভব নয় তাদের সচেতনভাবে এভয়েড করতে চেষ্টা করুন। মনে রাখতে হবে, ভ্যাম্পায়ার প্রতিনিয়ত আক্রমন করবে। আমাদেরও প্রতিনিয়ত এদের সরিয়ে দিতে নানান কিছিমের তাবিজ কবজ নিয়ে রেডি থাকতে হবে।
ভালকথা, অতিরিক্ত ইভেন্ট, নেটওয়ার্কিং সেশন ইত্যাদিও কিন্তু আপনার এনার্জী সাকার। এগুলো আপনার মূল্যবান সময়, মাথা, টাকা সবই খায়। সুতরাং, কোন ইভেন্টে যাবেন, কাদের কথা শুনবেন! সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেবার দায়িত্ব কিন্তু আপনারই। ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে ব্যবসার বাস্তব অভিজ্ঞতাহীন সেলিব্রেটিগণের লেকচার শোনার চেয়ে অভিজ্ঞ কামারের দোকানে গিয়ে হাঁপড় টানার কৌশল দেখলে আর হাতুড়ির মাপা বাড়ির আওয়াজ শুনলে সেটাও আপনার জীবনে কোন না কোন ভাবে ভ্যালু এড করলেও করতে পারে।


Jon Jandai'র জীবন দর্শন

এই ভদ্রলোকের এতগুলো বাড়ি আছে যে, তাকে এখন চিন্তা করতে হয় - আজ রাতে কোন বাড়িটায় ঘুমাবেন? গত ২০ বছরে একটা পোষাক না কিনেও তাকে এখন প্রায়শই গ্রামের লোকদের ডেকে পোষাক বিলিয়ে দিয়ে দিতে হয়!? অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসা নিয়ে তাকে কোন চিন্তাই করতে হয় না এবং এগুলোর জন্যে তিনি কারো উপর নির্ভরশীল নয় বিধায় জীবনের প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করছেন তিনি। জীবনকে সহজ করার চাবিকাঠি এখন তাঁর হাতের মুঠোয়।



অথচ একদিন সাফল্য আর শান্তির সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছিলেন। শহরের কঠিন পরিশ্রম আর প্রতিযোগীতার জীবন তাকে সেই স্বস্তি দিতে পারেনি। নিজেকে মানিয়ে নিতে এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। আশা, কিছু শিখে জীবনকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করবেন। কিন্তু তিনি আবিস্কার করেন - সেখানে তাঁর জীবনে কাজে লাগতে পারে এমন কিছু তো শেখায়ই না বরং প্রকৃতি ও সভ্যতাকে ধ্বংসের প্রক্রিয়াই শেখানো হচ্ছে। যেমন, আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টে শেখানো হচ্ছে কিভাবে প্রকৃতি ও পরিবেশকে ধ্বংস করে নগরায়নের নামে কনক্রীটের জঞ্জাল বানানো যায়। কৃষিতে শেখানো হচ্ছে অধিক ফলনের জন্যে কীটনাশক ও সারের ব্যবহারের নামে জমি, পানি ও জীব বৈচিত্র ধ্বংসের উপায়। তিনি ছেড়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়। জীবনের এমন নানান দ্বন্দ নিয়ে নিজের সাথে নিজের কথোপকথনের আত্ম-উপলব্দির এক পর্যায়ে গ্রামেই ফিরে যান তিনি। শুরু করেন কৃষি কাজ। সারা বছরে মাত্র কয়েকমাস পরিশ্রম করে তিনি তাঁর সকল প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা করে নিয়েছেন।

২০০৩ সাল থেকে থাইল্যান্ডের মানুষের মধ্যে তাঁর এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করার জন্যে তিনি PUNPUN Center নামে একটা উদ্যোগ নেন। এখানে তিনি "জীবনকে সহজ করার উপায়" সম্পর্কে শেখান। এছাড়াও দেশীয় ও দূলর্ভ প্রজাতির বীজ সংরক্ষন করাও এই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এছাড়াও থাইল্যান্ডের "ন্যাচারাল বিল্ডিং মুভমেন্ট" এর একজন লীডার এই ব্যক্তি। তাঁর নাম? Jon Jandai

তিনি বলেন - "সব সময় মনে রাখুন, জীবন অত্যন্ত সহজ। আমরাই জীবনকে অকারণে জটিল করে তুলি।" Jon Jandai এর জীবন দর্শন থেকে উদ্যোক্তাদের জন্যে শিক্ষণীয় বিষয়গুলোঃ

১) মনের ডাকে সাড়া দিতে হবে জানতে হবে।
২) নিজের উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখতে হবে।
৩) রিসোর্সের সন্ধানে না দৌড়ে যা আছে তাকেই কাজে লাগাতে জানতে হবে।
৪) অল্পে সন্তুষ্ট থাকা শিখতে হবে।
৫) অনুকরণ / অনুসরন করার প্রবণতা থেকে বের হয়ে স্বকীয়তা বজায় রাখতে হবে।
৬) পরিমানে কম হলেও নিয়মিত কাজ করে যেতে হবে।
৭) যখনই কোন সমস্যা সৃষ্টি হবে তখন কিছুটা সময়ের জন্যে থামতে হবে। নিজের ভেতরে ডুব দিয়ে ভুলগুলোকে খুঁজে বের করে সংশোধন করে নিতে হবে।


Sunday, January 6, 2019

একটি গুগল পাওয়ার তরে

উদ্যম, বিনিয়োগ আর উদ্ভাবনে মনকে উদার করো,
একটি গুগল পাওয়ার তরে হাজার গুগল গড়ো।

ইন্টারনেট ব্যবহার করে কিন্তু গুগলের নাম শোনেনি, এমন মানুষ সম্ভবত খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন (যেখান থেকে ইন্টারনেটে প্রাপ্য তথ্যের ঠিকানা বের করা যায়) গুগলের আগেও ছিল, তবে গুগলই প্রথম ব্যাপারটিতে সাংস্কৃতিক মাত্রা যোগ করেছে। সার্চ ইঞ্জিনের ব্যাপার এখন ইন্টারনেট-সংস্কৃতির মূল অনুষঙ্গ। ‘গুগল করো’, ‘গুগলে গিয়ে দেখে নিয়ো’ ইত্যাদি এখন খুবই সাধারণ কথা। ইংরেজিতে এমনকি ‘গুগলাইজেশন’ নামে একটি নতুন শব্দ গুগলের সর্বগ্রাসী রূপকে প্রকাশ করে। বলা হয়ে থাকে বর্তমানে ৭০ শতাংশেরও বেশি ওয়েবসাইটে লোকজন গুগল তথা সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে যায়! সাদামাটা দেখতে গুগলের প্রথম পাতাটিতে এর ব্যবসায়িক ব্যাপারটি সহজে দেখা যায় না, যদিও গুগল একটি মাল্টি বিলিয়ন কোম্পানি।

আইটি ক্ষেত্রের সূতিকাগার আমেরিকার সিলিকন ভ্যালির বিকাশের পেছনে সবচেয়ে বড় উপাদান স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভাবনের চর্চা, উদ্যমী প্রযুক্তিবিদ ও প্রকৌশলীদের ‘আইডিয়ার পেছনে’ উদ্যমী বিনিয়োগকারীদের (ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট) অবস্থান এবং হাজার হাজার ‘সাকসেসফুলি ফেইলিউরের কেস’।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় একজন শিক্ষার্থীর মানসপট তৈরি হয়। তার চিন্তাচেতনা এবং ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের একটি স্বপ্নও সে এই সময় বোনে। নতুন কিছু গড়ে তোলার একটি আকাঙ্ক্ষাও হয় তীব্র। সিলিকন ভ্যালি তাদের সেই স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষাকে মূল্য দেয়। স্বপ্ন নির্মাণ ও বাস্তবায়নে দরকার সুযোগ এবং অর্থ। সিলিকন ভ্যালিতে রয়েছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি, যারা অর্থ নিয়ে দাঁড়ায় নতুন স্বপ্নচারীদের পাশে। আছে ব্যক্তি উদ্যমী বিনিয়োগকারীরা, যারা স্বপ্নের পেছনে অর্থ বিনিয়োগে পিছপা হয় না।

একজন শিক্ষার্থী বা শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপ হয়তো কাজ করছে কোনো নতুন ধারণা নিয়ে, সেটির পেছনের বিজ্ঞান আর ব্যবসাটাকে সাজাতে। দুটো জিনিসই দরকার। প্রথমত নতুন ভাবনাটি যে ফেলনা নয়, সেটি প্রমাণ করা। এ জন্য তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে নানা চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়। কখনো কখনো তারা খুঁজে পায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাই, যারা কাজ করছে বিভিন্ন কোম্পানিতে। এরপর সেটির ব্যবসায়িক দিকটি ভাবতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসার কাজে কেউ দাতব্য প্রতিষ্ঠান খোলে না। কাজেই বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ব্যবসায়িক মডেলটা ভালোভাবেই তৈরি করতে হয়। তারপর শুরু হয় বিনিয়োগকারী খোঁজার পালা। যেসব চিন্তা-ভাবনা, মডেল কাগজ আর কম্পিউটারে ছিল, সেগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা। কেউ সফল হয়, কেউ হয় না!

গুগলের গল্পটাই বলা যাক। ১৯৯৬ সালে ল্যারি পেজ আর সের্গেই ব্রিন স্ট্যানফোর্ডে তাদের পিএইচডি রিসার্চ হিসেবে ওয়েবে একটি নতুন অনুসন্ধানী এলগারিদম(ইন্টারনেটে তথ্য অনুসন্ধান নতুন একটি পথ) নিয়ে কাজ শুরু করে, সেই সময়কার সার্চ ইঞ্জিনগুলোর প্রচলিত পথ থেকে সরে এসে তারা ওয়েবপাতাগুলোকে একটি র‌্যাংকিংয়ের আওতায় নিয়ে আসে। পেজ আর ব্রিন তাদের মডেল সার্চ ইঞ্জিনের নাম দেয় ব্যাকরাব (Backrub)। তবে, পরে তারা গুগল (Google) শব্দটি বেছে নেয়। গুগল হলো ১-এর পর ১০০টি শূন্য দিলে যে সংখ্যাটি হয়, সেটি। সার্চ ইঞ্জিনটি কত বেশি তথ্য খুঁজবে, সেটা বোঝাতে এই শব্দটি নেওয়া হয়। শুরুতে এর ঠিকানা ছিল google.stanford.edu। পরে ১৯৯৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর এটি হয় google.com। ১৯৯৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর এক বন্ধুর গাড়ির গ্যারেজে, ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কে গুগলের যাত্রা শুরু। দুই বন্ধুর টাকা ছাড়াও এই সময় তাদের পাশে দাঁড়ান সান মাইক্রোসিস্টেমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এন্ডি বেথটোশেইম। কোম্পানি হওয়ার আগেই তিনি পেজ আর ব্রিনকে এক লাখ ডলার দেন। পরের বছর জুন মাসে দুটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি গুগলে আড়াই কোটি (২৫ মিলিয়ন) ডলার বিনিয়োগ করে। আর ২০০৪ সালে ৮৫ ডলারে গুগল শেয়ারবাজারে তাদের শেয়ার ছেড়ে দুই হাজার ৩০০ কোটি ডলার জোগাড় করে! বিনিয়োগকারীরা যে ভুল করেনি, তার প্রমাণ হলো, মাত্র তিন বছরের মাথায় এর প্রতিটি শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ৭০০ ডলারে!

যে সময়ে গুগলের এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা পায়, সে সময় কমপক্ষে কয়েক হাজার অনুরূপ উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। একটি সাধারণ হিসাবে বলা হয়ে থাকে, গড়পড়তা একটি সফল গুগল পাওয়ার জন্য কমপক্ষে আড়াই হাজার উদ্যোগের প্রয়োজন!

কাজেই, সফল উদ্যোক্তা আর সফল উদ্যোগ পেতে হলে আমাদের চেষ্টাবান হাজার হাজার উদ্যোক্তা প্রয়োজন হবে। ব্যর্থ উদ্যোক্তাদের প্রতি ভ্রু কুঁচকে তাকালে হবে না, তাদের নতুন উদ্যমে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আর সমাজের দায়িত্ব এখানে সুবিশাল। আমরা কেবল সফল গল্প খুঁজি। কিন্তু প্রতিটি সফল গল্প হওয়ার জন্য যে হাজারখানেক ‘সাকসেসফুলি ফেইলিওর’ কেস থাকা দরকার, সেটা বিশ্বাস করি না!
একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য এই ধারাটি আমাদের ভাঙতে হবে। আমাদের তরুণদের উদ্যমী, আত্মবিশ্বাসী এবং সফল হওয়ার জন্য তাদের বেশি বেশি সুযোগ দিতে হবে। তাদের অনেকে ব্যর্থ হবে, কিন্তু সুযোগ থাকলে তারা ঘুরে দাঁড়াবে। তাদের জন্য আমাদের এই কাজগুলো করতেই হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে তাদের শিক্ষার্থীরা নতুন চিন্তা করে, নতুন উদ্যম খুঁজে বেড়ায়। দৃষ্টান্ত তৈরির মতো বুয়েটের অধ্যাপক লুৎফুল কবীর স্যারের প্রি-পেইড মিটারকে গবেষণাগার থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদনে নিয়ে আসার যন্ত্রণা পোহাতে হবে। অন্যদিকে সমাজের বিত্তবান বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসতে হবে নতুন নতুন ধারণাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে। ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরও এই দিকে নজর দিতে হবে।

আর সরকার? সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজটা করবে, পথের বাধা সরিয়ে নেবে। যৌথ বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা দেবে, অভয় দেবে। দেশীয় উদ্যোগ যাতে বিদেশি জাত পণ্যের সঙ্গে লড়তে পারে তার ব্যবস্থা নেবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ইনকিউবেটর, উদ্যোক্তা পরিচর্চাকেন্দ্র গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।

কাজগুলো কঠিন নয়, আমাদের সবাইকে এখন থেকেই যার যার কাজ শুরু করতে হবে।

মুনির হাসান: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।


Saturday, January 5, 2019

স্টিভ জবসের পথ-১ : প্রস্তাবনা

একটি রেস্তোরার অপেক্ষমান কক্ষে অপেক্ষা করছেন জে এলিয়ট, ৪৪, সদ্য ইন্টেল ত্যাগ করা কর্মকর্তা। বসে বসে নিজের "দূর্ভাগ্যের কথা " পড়ছেন পত্রিকায়। ঈগল কম্পিউটার নামে একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য সম্প্রতি তিনি তার বস এন্ডি গ্রুভের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। পত্রিকায় ঈগল কম্পিউটারের মৃত্যুর খবর ছাপা হয়েছে!

এই স্টার্টআপ কোম্পানি যেদিন গণ‌-প্রস্তাব ছাড়ে সেদিনই এর শীর্ষনির্বাহী কোটিপতি বনে যায়। সহ-প্রতিষ্ঠাতাদের সঙ্গেনিয়ে সে যায় খানা-পিনা করতে। সেখান থেকে যায় নিজের জন্য একটি ফেরারী গাড়ি কিনতে! টেস্ট ট্রায়াল দিতে বের হয়ে দূর্ঘটনায় পড়ে এবং মারা যায়। শীর্ষ নির্বাহীর মৃত্যুতে কোম্পানিও মারা যায়। সে সঙ্গে জে যে কাজের জন্য চাকরি ছেড়েছেন, সেটিতে আর যোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
একই রুমে ২৫ বছর বয়সী এক তরুনও অপেক্ষারত ছিল। তাদের আলাপের মাঝখানে তারা দু’জন আবিস্কার করে দুজনেরই দাড়ি আছ আর দুজনেই কম্পিউটার পছন্দ করে। যুবকটি নিজেকে স্টিভ জবস নামে পরিচয় দিয়ে বলে সে এপল কম্পিউটার নামে একটি কোম্পানির বোর্ড চেয়ারম্যান। জে তখনো সেভাবে এপলের নাম শোনেনি। শোনার কথাও নয়। কাজে ২৫ বছর বয়সী জবসের কোম্পানি নিয়ে তেমন আগ্রহও তার হয়নি।

অন্যদিকে জবস দেখেছে ৪৪ বছর জে'র মধ্যে এমমন কিছু আছে যা সে খুঁজছে কিছু দিন ধরে। জে’র কাছ থেকে জেনেছে সে নতুন কিছু করতে আগ্রহী এবং আইবিএমের ধীরে চলা নীতি তার পছন্দ নয়। কাজে জবস জে কে এপল যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানায়!

জে বিনীতভাবে জানায়,”আমাকে এফোর্ড করা তোমাদের দ্বারা সম্ভব নয়।"

এ ঘটনার মাত্র কয়েকদিন পরে পূজিবাজারে আত্মপ্রকাশ করে এপল। এপলে বাজার মূল্য হয় ২৫০ মিলিয়ন ডলার! কোম্পানি আর স্টিভের পক্ষে জে কে কেনা সম্ভব হয়।

দুই সপ্তাহ পরের শুক্রবারে জে এলিয়ট এপলে কাজ করতে শুরু করেন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট।  বেতন সামান্য বেড়েছে, স্টেক অপশনও বেড়েছে। এবং সঙ্গে ইন্টেল গুরুর আশীর্বাদ, “এপল কোথাও যাবে না। তুমি একটা মস্ত বড় ভুল করছো"

কম্পিউটার জগতের অন্যান্যদের সঙ্গে জবসের পার্থক্য তার শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত নিশ্চুপ থাকা। কাজে প্রথম দিন  আলাপ আলোচনায় জে তার কাজ সম্পর্কে কিছই জানতে পারলো না! খালি জানলো স্পিভ পরদিন সকালে তাকে কোথকও নিয়ে যাবে।

পরদিন জবস থাকে পিএআরসি, জেরক্সের রিসার্চ সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানে এমন কিছু তারা দেখেন যা পরে মাউস নামে পরিচিত হয়। সে সময় পিএআরসি এমন মেইন ফ্রেম কম্পিউটার ডিজাইন করার চেষ্টা করছিল যার দাম হবে দশ থেকে বিশ হাজার ডলার! কারণ আইবিএমের সঙ্গে লড়তে হবে!

তবে, স্টিভের মাধায় এমন কিছু ছিল না। তার মাধায় ছিল “ সবার জন্য কম্পিউটার”।

এখন আমরা জানি, পার্কে ঐদিন স্টিভ জবস কম্পিউটারের ভবিষ্যত দেখেছেন। দেখেছেন কীভাবে এই যন্ত্র দিয়ে মানুষের তিন ‘সি’কে (Connect, Consume and Communication) বদলে দেওয়া যাবে।
সেদিন থেকে আসলে স্টিভ জবস ঠিক সে কাজটি করছেন!!!


দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে জে এলিয়ট আর উইলিয়াম এর সিমনের এই বইটা কিনে এনেছি। তর সইলো না দেখে পড়তে শুরু করে দিয়েছি। ক’দিন আগে ফেসবুকে গোলাম নবীর একটি স্ট্যাটাস ছিল এপল নিয়ে। ভোরের কাগজে কাজ করার সময় (১৫ বছর আগে) সিলিকন ভ্যালির ওপর একটি বিশেষ পাতা করেছিলাম একুশ শতকে। সে সময় সিলিকন ভ্যালি নিয়ে অনেক পড়াশোনা করতে হয়েছে। পরে, অবশ্য সার্ভিস ডেলিভারির চাপে পড়ে উদ্যোক্তাদের ব্যাপারগুলো থেকে সরে এসেছি। গত বছর থেকে আবার উদ্যোক্তা বিষয় নিয়ে কাজ করতে শুরু করেছি। সেজন্য হোমওয়ার্ক হিসাবে বিভিন্ন বই পড়তে শুরু করেছি। চেষ্টা করছি বইগুলো সম্পর্কে আমার নেটওয়ার্কের সকলকে অবহিত করতে। যেখানে যেটুকু শেয়ার করার জন্য পাচ্ছি।

খালি মুশ্কিল হল ‌ আমার মত অলস লোক চাইলেও অনেক কিছু করতে পারে না।

দেখা যাক এটা কতদূর শেয়ার করা যায়।

সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।   


সারপ্রাইজ

সারপ্রাইজ

মানুষ যখন সারপ্রাইজড হয় তখনই তার ডোপামিন নিসরণ হয়। ফলে, তার মধ্যে এক বড় আবেগের সঞ্চার হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেটা আনন্দের। আর আনন্দিত হলেই মানুষ ভাগাভাগি, শেয়ার করতে চায়। 

কাজে, ইমোশনাল মার্কেটিং-এর একটা ভাল কৌশল হচ্ছে সারপ্রাইজ। আর এমনটা খুঁজলে অনেক উদাহরণও পাওয়া যায়। গুগলের দেশভাগ নিয়ে বিজ্ঞাপনটির শেষে এমন একটা সারপ্রাইজ থাকে। তবে, বিজ্ঞাপনটির শুরু থেকে এটি দর্শকের জন্য সারপ্রাইজ থাকে না।

কিন্তু অনেক ছোট ছোট টেকনিক খাটাইয়া লোকদের চমকিত করা যায়। একটা উদাহরণ দেই। এটি বিদেশ খেকে নেওয়া। 

ম্যাকডোনাল্ডে কোক হলো তিন সাইজ - স্মল, মিডিয়াম ও লার্জ। ওরা একদিন তিনটা সাইজের সেইম দাম করে দিয়েছে। তো, একজন লোক একটা অর্ডার দেওয়ার পর ওয়েটার বললো - আপনি ইচ্ছে করলেই লার্জ কোক নিতে পারেন। কারণ তিনটারই দাম সমান।"

অন্যদিকে, একই কাজ করেছে টাকো বেল। তবে, তাদের কাজটা অন্যরকম। কেউ যখন কোন অর্ডার দিচ্ছে তকণ ওরা জানতে চাচ্ছে কোক কোন সাইজের হবে - স্মল, মিডিয়াম, লার্জ না সারপ্রাইজ। 

অর্ডার কারী জানতে চাইলো - সারপ্রাইজটা কোন সাইজ।

"ওটা সারপ্রাইজ!!!" তড়িৎ জবাব।

নেওয়ার পর দেখা গেল সারপ্রাইজ আসলে লার্জ। 

এর ইম্প্যাক্ট সম্পর্কে আমি লিখতে চাই না। শুধু বলতে চাই সব ইমোশনাল মার্কেটিং করার জন্য বিপুল টাকা খরচ করে চৌধুরী সাহেবদের দিয়ে টিভিসি বানাতে হয় না।



Thursday, January 3, 2019

Learn how to build a brand from the Japanese

MUJI, a Japanese brand, is a big deal. They sell all kinds of stuff from furnitures to kitchenware and travel goods. They have 385 stores in Japan, and 255 more overseas. They made more than $200 million in revenue last year.
They have quite a weird name for such a big company. MUJI, an abbreviation for “Mujirushi Ryōhin” translates to “No Brand, Quality Goods”.



One of the biggest brand in Japan is literally branding themselves as “NO BRAND”. How does this work?
Their product packaging is interesting too:
There are only 3 colors on their labels — black, red and brown. Simple lines and Helvetica text. I think this is what their design assets might look like:
Amazingly plain design for such a huge global brand. Why do they even need designers?
Let’s have a look at another Japanese brand, Uniqlo. They are in the clothing business and its owner is currently the richest man in Japan. They made $14 billion last year.


In May 1984, they opened a unisex casual wear store in Fukuro-machi, Naka-ku, Hiroshima under the name “Unique Clothing Warehouse”. Initially, from the contraction of “unique clothing”, the brand was going to register under “uni-clo”. However, in 1988, during administration work between Hong Kong in relation to the brand, staff in charge of registration misread the “C” as “Q”, and that is how the brand name was born. From then, Tadashi Yanai changed the store name to “uniqlo” across Japan.
How funny. The biggest brand in Japan right now was born out of a spelling mistake.
So, what can we learn from these Japanese mega-brands?
You build a brand not by getting the name right, but by doing the right things.
When you deliver quality and value to your customers, you earn their trust. You build a reputation, a brand.
I really love this quote by Jeff Bezos, the founder of Amazon:


When I talk about kitchenware bought from MUJI, or clothes from UNIQLO, I don’t talk about how good their brand campaigns are.

I talk about quality. About how much I love the finishing on my handcrafted wooden MUJI bowls.

I talk about innovation. About how much I love the fact that I can use this one rod from MUJI with 5 other cleaning tools.
I talk about design. About how I can relate to the hard work of the designers. How they meticulously make thoughtful decisions for me.
Branding was never about the name, logo, colors, or the font. It was always about qualityinnovation and designdelivered consistently to the customer. This is what we should learn from the Japanese.


প্রচার, প্রসারের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম : ওয়ার্ড অব মাউথ

অপর্ণা সেনের সম্পাদনায় আনন্দবাজার গ্রুপের সানন্দা বেরুচ্ছে তখন। পাতা জুড়ে বড় বড় বাহারি বিজ্ঞাপন। এর মধ্যে চোখে পড়ল শাড়ির দোকানের বিজ্ঞাপন। কয়েক সংখ্যা ধরে পর পর এবং কয়েক পৃষ্ঠাব্যাপী। 
কলকাতা মানেই পর্যটকদের কাছে শাড়ির আকর্ষণ। কলকাতা জুড়ে এখন শাড়ির দোকান। কিন্তু তখন নিউমার্কেট, পার্ক স্ট্রিটের কিছু দোকান, যাদবপুর আর বড়বাজারের কিছু দোকানই ছিল শাড়ি বিক্রিবাট্টার জন্য বিখ্যাত। 
সানন্দায় যে দোকানটির কয়েক পাতা জুড়ে বিজ্ঞাপনে চোখ আটকে গেল সেটা ওই জায়গাগুলোর বাইরের একটা জায়গা। অন্য একটা ঠিকানা। বিড়লা প্ল্যানেটরিয়ামের উল্টোদিকে একটা নতুন মার্কেট হয়েছে। 
সেই মার্কেটের মধ্যে একটা দোকান। সেই বিজ্ঞাপনের বাহার দেখে কণা বলল, ওই দোকানেই একবার যেতে হবে। শাড়ির ওপর এত সুন্দর সুন্দর প্রচার দিচ্ছে ওরা, নিশ্চয়ই ভালো জিনিস মিলবে ওখানে হাজির হলে! আমরা তখন কলকাতায় বেড়াতে গেছি। একদিন বিকেলে কণা ঢুঁ দিল সেখানে। সঙ্গে আমি।  
মার্কেটটায় ঢুকে ভুরু কুঁচকে গেল। নতুন উদ্বোধন হওয়া মার্কেটটিতে নানা বিষয়ের দোকান আছে। কিন্তু শাড়ির দোকান ওই একটাই! একটা মার্কেটে একটা শাড়ির দোকান। এক দোকান করেই এত বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি! মনে মনে একটু বিস্মিতই হলাম। দোকানে ঢুকলাম। ছিমছাম। সাজানো গোছানো। দেখলাম, এক মাড়োয়ারি দম্পতি দোকান চালাচ্ছেন। ভদ্রলোকের বয়স মনে হল পঞ্চাশের নিচে। ভদ্রমহিলার বয়সও কাছকাছি হবে। কণা শাড়ি দেখার আগে প্রশ্নটা করেই ফেলে, ‘যদিও প্রচুর শাড়ির স্টক দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু নতুন এক দোকান করেই এত এত বিজ্ঞাপন করছেন! পোষাবে?’ ভদ্রমহিলা ওনার ঝকঝকে দাঁতগুলো বের করে হাসলেন, ‘বিজনেস মানেই রিস্ক। বিজনেস মানেই ইনভেস্টমেন্ট। ওইভাবে ম্যাসিভ প্রচার না করলে সবার চোখে পড়ত না। এই যে আপনারা চলে এসেছেন, বিজ্ঞাপন না দেখলে তো পুরনো দোকানেই ঢুকতেন। 
মনে হচ্ছে আপনারা বাংলাদেশ থেকে বেড়াতে এসেছেন। তাই না?’ ভদ্রলোক আমায় বললেন, এত শাড়ি একবারেই একসঙ্গে দোকানে তুলতে পেরেছি কারণ আমাদের একটা অ্যাডভানটেজ আছে। শাড়ির ব্যবসাটা আমাদের অনেকদিনের। আগে আমরা শাড়ি সাপ্লাই করতাম। এখন আমরা নিজেরাই দোকানটা করে ফেলেছি। 
‘প্রচারেই প্রসার। বুঝলাম সে জন্যেই বিজ্ঞাপন করছেন বেশি বেশি। কিন্তু সানন্দায় এত বিজ্ঞাপন করার আইডিয়াটা এলো কোত্থেকে?’ আমার প্রশ্ন ছিল তার কাছে। ভদ্রলোক বললেন, ‘আসলে ভেবে দেখলাম বাঙালিরাই শাড়ির আসল ক্রেতা। সানন্দা কাগজটি বাঙালিদের পছন্দ। সে জন্য ডেইলি পেপারে না গিয়ে ম্যাগাজিন বেছে নিয়েছি। তাতে দেখা যাচ্ছে প্রচুর লোকজন আসছে।’ কিছু শাড়ি বেছে বেছে কিনে ফেলল কণা। স্টকে পছন্দ করার মতোই অনেক কাপড়। দামও তুলনামূলকভাবে বেশি নয়। শাড়িগুলো প্যাকেটে ভরে দিলেন না উনারা। বললেন ফলস লাগিয়ে দেওয়া হবে প্রতিটি শাড়িতে। সে জন্য একদিন পরে হোটেলে পৌঁছে দেওয়া হবে। ফলস লাগানো ও ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য কোনো এক্সট্রা চার্জ ধরা হবে না। এ ধরনের ছোট ছোট সার্ভিস দিয়েই ক্লায়েন্টদের মুগ্ধ করার পদ্ধতিটা ওদের বেশ রপ্ত বুঝতে পারলাম। 
আমরা যখন হাসিমুখে দোকানটা থেকে বেরুচ্ছি, সেই সময় একটা বাচ্চা দৌড়ে এল। ১০-১২ বছর বয়স হবে ছেলেটির। দোকানদার মহিলার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করল ছেলেটি। ফুলের মতো ফুটফুটে। অল্প বািচত শুনেই বুঝলাম, এই শাড়ির দোকানে আসতে, থাকতে, কাজ করতে কিশোরটির একদম ভালো লাগছে না। জিজ্ঞেস করলাম, কার ছেলে? ভদ্রলোক হেসে বললেন, আমাদের ছেলে। কণা বলল, ‘এ সময়ে ও এখানে কেন? স্কুল নেই?’ ভদ্রমহিলার উত্তর, ‘স্কুলে গিয়ে কী করবে?’ ‘পড়াশোনা করবে!’ ‘তা তো করবে। মিনিমাম লেখাপড়া তো ওকে আমরা করাবোই। তারপর?’ ‘তারপর মানে?’ কণা অবাক। আমিও। কণা প্রশ্ন করল, ‘মিনিমাম কেন? ম্যাক্সিমাম না কেন?’ ভদ্রমহিলার ঠোঁটে হাসি, ‘ম্যাক্সিমাম পড়াশোনা করে কী হবে? ধরুন করল। তারপর কী হবে? ক্যারিয়ার তো? সেটা তো চাকরির বদলে বিজনেস করলেও হয়। হয় না? লক্ষ্য তো একটাই। নিজের পায়ে দাঁড়ানো। ভালো উপার্জন। সুস্থ জীবনযাপন। এই তো?’ মাথা নাড়লাম আমরা। উনার কথায় যুক্তি আছে। ভদ্রমহিলার কথা, ‘কাজেই ছোটবেলা থেকে যদি আমাদের ছেলেটিকে শাড়ির মধ্যে রেখে দিই, তাহলে শাড়ির ব্যাপারে ওর যে পরিষ্কার ধারণা হবে, যে এক্সপার্ট নলেজ সরাসরি তৈরি হবে, সেটা তো জেনারেল স্কুল-কলেজের বিশাল পড়াশোনা থেকে পাওয়া যাবে না। যাবে?’ ভদ্রলোক বললেন, ‘সুতরাং আমরা ঠিক করেছি, স্কুল-কলেজের এডুকেশনের পাশাপাশি আমাদের ছেলেটিকে ছোটবেলা থেকেই শাড়ির মধ্যে রেখে দেব। তাতে প্রথম প্রথম তার একঘেয়ে মনে হবে। শেষে অভ্যস্ত হবে। তারপর আনন্দ পাবে। তারপর এক্সপার্ট হয়ে উঠবে। যে স্পেশালিটি ওর ক্যারিয়ার শক্ত করে দেবে।’  ‘এবং তাই হচ্ছে কিন্তু। শাড়ি দেখছে। বুঝছে। শাড়ি সম্পর্কে জানছে। এখনই ওকে জিজ্ঞেস করুন কোনটা কী শাড়ি? কোথায় তৈরি হয়? কী দিয়ে বানায়? কারা বানায়? কোত্থেকে আসে? সব গড় গড় করে এক্ষুনি বলে দিতে পারবে। জিজ্ঞেস করুন কোন শাড়িটা আপনাকে মানাবে। সে বলে দেবে কিন্তু!’ নিজ পুত্রের সম্পর্কে কথাগুলো বললেন ভদ্রমহিলা। 
জানতে চাইলাম, ‘ওর কী নাম?’ ‘মিকি?’ ‘মিকি! বেশ আনকমন নাম।’ ‘হ্যাঁ। আমাদের ছেলে টেলিভিশনে অনেক কার্টুন ছবি দেখে। সেখান থেকে আমরা নামটা নিয়েছি।’ আমার মনে হল, ছেলেটি কার্টুনের চরিত্রের মতো সামনে দিয়ে ছোটাছুটি করে যে বেড়ায় সেটাই তারা পছন্দ করেন। সেই পছন্দের প্রতিফলন ওই নামের মধ্যে। 
ওই দিনের পর সময় গেছে অনেক। মাঝে চলে গেল অনেক বছর। আমরা যে বছরই কলকাতা গেছি, একবারের জন্য হলেও ঢুকেছি সেই দোকানে। কমবেশি শাড়ি কিনেছে কণা। তাই মিকিকে চোখের সামনে বড় হতে দেখলাম আমরা। দেখলাম, শুধু গায়ে গতরে, দেখতে শুনতে বড় হল না মিকি, শাড়ি সম্পর্কে আশ্চর্য রকমভাবে প্রচুর পড়াশোনাও তার এত বছরে হয়ে গেছে। ইন্টারনেট ঘেঁটে, স্যাটেলাইট টিভি ইনফরমেটিভ চ্যানেল দেখে, বিশেষ টাইপের বই পড়ে মিকি শাড়ি সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা অর্জন করছে। কোন ধরনের শাড়ি কোথায় অর্ডার দিয়ে কোত্থেকে আনতে হবে, বিয়ের সময় কেমন শাড়ি বেশি আকর্ষণ, কোন শাড়ির কেমন কোয়ালিটি, রং, বুনন, সুতো সবকিছু প্রায় নখদর্পণে ওর। শাড়ি সম্পর্কে মিকিকে রীতিমতো একটা অভিধানের মতো হয়ে যেতে দেখলাম। আমরা যখনই ওই দোকানে গেছি, তখনই মিকির সঙ্গে কথা বলেছি দীর্ঘক্ষণ। মজা পেয়েছি কথা বলে। টের পেলাম এর মধ্যে, কলকাতার প্রায় সব বড় শাড়ির স্টোরের লোকজন মিকিকে চেনে এক নামে। ততদিনে পার্ক স্ট্রিটে আর দক্ষিণাপণে ওদের আরও দুটো বড় দোকান হয়ে গেছে। 
শাড়ি সম্পর্কে অনেকেই মিকির কাছে ফোনে সাজেশন চায়। সেসবও দেখলাম। ১৮-১৯ বছরের একটি ছেলে সারা কলকাতার এক ‘বিশেষ নাম’ হয়ে গেল। কখনও এমন হয়েছে আমাকে একা যখন কলকাতায় আসতে হয়েছে, আমি কণার জন্য শাড়ি নিয়ে গেছি। পরের যাত্রায় মিকির কাছে অনুযোগ করেছি, সেবারের তিনটা শাড়ি কণার পছন্দ হয়নি। শুনে মিকি হেসেছে, বলেছে, ‘যখন নিয়েছিলেন তখন নিশ্চয়ই আমি দোকানে ছিলাম না। আমি জানলে ওগুলো কিনতে দিতাম না। কণা ভাবির কোন রংয়ের ওপর কোন প্রিন্ট পছন্দ, কোন বুনন পছন্দ সেটা তো আমি জানি। এ দুটো নিয়ে যান। পছন্দ না হলে আমাকে পরেরবার এসে মার দেবেন। আর পরেরবার আগের শাড়িগুলো অবশ্যই ফেরত নিয়ে আসবেন। নতুন কাপড়ের সঙ্গে এক্সচেঞ্জ করে দেব। সমস্যা নেই। 
মিকি আমার কাছে ক্রমশ এক অভিনব চরিত্র হয়ে উঠল। শাড়ি নিয়ে তার বিশেষত্ব, বিজনেস স্ট্র্যাটেজি, আচার-ব্যবহার সব দেখতে দেখতে মনে হল, তাকে যে তার মাড়োয়ারি বাবা-মা জজ-ব্যারিস্টার বানানোর চেষ্টা না করে ‘শাড়ি বিশেষজ্ঞ’ বানাল সেটাই কি ঠিক? ঠিক নয়? মানুষের জীবন তো একটাই। হাজারো অ্যাভারেজের ভিড়ে মানুষের হারিয়ে যাওয়ার মধ্যেই কি কোনো বাহাদুরি আছে? একজন মানুষের ‘জ্যাক অব অল ট্রেড’ হওয়া বেশি জরুরি, নাকি ‘মাস্টার অব সামথিং’ হওয়াটাই প্রয়োজনীয় বেশি? 
সেই মিকি একসময় বিয়ে করে। পিএইচডি করা মেয়ে। ওরা দাম্পত্যে অনেক সুখী অথচ চিন্তাভাবনা, জীবনযাপন, ব্যস্ততায় কোথাও কোনো মিল নেই দু’জনের। বিষয়টি মিকিকে ভাবায় এখন। তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কীভাবে গড়ে তুলবে মিকি নিশ্চিত নয়। বাবার দর্শন, নাকি মায়ের আদর্শ। মা নিশ্চয়ই চাইবে, তাদের সন্তান তার মতো পিএইচডি করুক, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হোক। তখন তো মিকি বাধা দিতে পারবে না। কিন্তু সেটাও কি ঠিক হবে? শেষবার দেখায় মিকি আমার কাছে এই প্রশ্ন করেছিল। আমি কোনো উত্তর দিইনি। কারণ এই জিজ্ঞাসার যথার্থ উত্তর তো আমার কাছেও নেই।
ফরিদুর  রেজা  সাগর
লেখক : শিশুসাহিত্যিকমিডিয়া ব্যক্তিত্ব

কম্পিটেটিভ এডভান্টেজ

আমাদের নবীন উদ্যোক্তাদের অনেকেই একটি বিষয়ে ধারনা রাখেন না। এটি হচ্ছে কম্পিটেটিভ এন্ডভান্টেজ-সোজা বাংলায় বললে অন্যের তুলনায় আপনার প্রোডাক্ট কেনার সুবিধাটা কী?  এই সুবিধাটাই হচ্ছে আপনার প্রতিযোগিতার যোগ্যতা বা কম্পিটেটিভ এডভান্টেজ।আমাদের সাধারন ধারনা হচ্ছে অন্যেরা যেহেতু একই জিনিস বানায় আমিও বানালাম-তাহলে আমারটাও বিক্রি হবে। ব্যবসা আসলে এরকম সরলীকরনে চলে না।
কম্পিটেটিভ এডভান্টেজ কীভাবে খুঁজে বের করবেন?

যে কোনো প্রোডাক্ট সেটি যদি আগে থেকেই বাজারে থেকে থাকে, তাহলে উদ্যোক্তাকে প্রথমেই নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, ‘অন্য প্রোডাক্ট রেখে আমার প্রোডাক্টটি লোকজন কেন কিনবে?’ এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন, এর জবাব যখন পরিস্কার হয়ে যাবে, তখন আপনার পক্ষে ব্যবসা করা সহজ হয়ে যাবে।আপনার প্রোডাক্টটি কেন কিনতে পারে, তার অনেকগুলো কারন থাকতে পারে। যেমন,
১. অন্যের তুলনায় আপনার দাম কম।
২. দাম সমান কিন্তু মান বেশি।
৩. দাম বেশি কিন্তু মান অনেক বেশি ভালো যেটিতে শেষ বিচারে ক্রেতা লাভবান হবেন।
৫. আপনারটার ডিজাইন ইউনিক এবং অন্যের তুলনায় সেটি বেশি কার্যকর।
৬. আপনার ডেলিভারি অন্যের তুলনায় দ্রুত।
৭. আপনার বিক্রয় পরবর্তী সেবা দেয়ার সামর্থ বেশি।
৮. আপনি অন্যের তুলনায় বেশি পরিমান বা বেশি মেয়াদে বাকি দিতে পারেন।-ইত্যাদি।

এখন কথা হচ্ছে আপনি সবগুলো কম্পিটেটিভ এডভান্টেজ একসঙ্গে নিতে পারবেন না। মানও ভালো অথচ দামেও কম-এটি আসলে সম্ভব নয়।

মান ভালো করতে হলে ভালো মেশিনারী লাগবে, ভালো কাঁচামাল লাগবে-তখন দাম কমিয়ে রাখা সম্ভব নয়। একই ভাবে যিনি বিক্রয় পরবর্তী সার্ভিস দিতে সময় ও পয়সা খরচ করবেন, তিনি কমদামে দিতে পারবেন না।কিন্তু উদ্যোক্তাকে দেখতে হবে এরমাঝে কতবেশি কম্পিটেটিভ এডভান্টেজ তিনি দখল করতে পারেন এবং কতবেশি এডভান্টেজ তিনি খুঁজে বের করতে পারেন-এই সম্ভাবনা আনলিমিটেড, যতবেশি সুবিধা তিনি তৈরি করতে পারবেন তত বেশি তিনি অন্যের তুলনায় এগিয়ে থাকবেন।

যদি কম্পিটেটিভ এডভান্টেজ না থাকে, তাহলে সে ব্যবসায় না যাওয়াই উচিত।
একটি কেসস্টাডি:এখন আমরা বুঝার জন্য একটি কেসস্টাডি নিব। এই লেখাটি আমাদের গ্রুপেই পোস্ট করেছেন আমাদের এক বন্ধু।  প্রথমে তাঁর হতাশামাখা স্ট্যাটাসটির প্রয়োজনীয় অংশটি পড়া যাক:
উনার সঙ্গে আমার আপকামিং একটা প্রোডাক্টের প্রাইস ফিক্সিং নিয়ে দরকষাকষি চলছে। মানে আমি প্রোডাক্টটা উনাকে গছাতে চাইছি। উনি ও খুব আগ্রহী। তো কথা বার্তা চলছে…………
ব্যাবসায়ীঃ ইন্ডিয়ার অমুক ব্র্যান্ডের মাল ৮ মাস লাস্টিং করে, চায়নার অমুক ব্র্যান্ডের মাল ৬ মাস লাস্টিং করে। আপনারটা যদি ৫ মাস ও লাস্টিং করে তাইলেও চলবে। সব আমি নিমু, আর কাউরে দিতে পারবেননা।আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আগে স্যাম্পল দিবো, আপনি টেস্ট করে দেখে তারপরে যদি কোয়ালিটি আপনার মনঃপুত হয় তাইলে তো নিবেন? এখন রেট কত করে দিবেন বলেন।ব্যবসায়ীঃ কত করে দিলে আপনার পোষাবে?আমিঃ আমারে তো যত বেশী দিবেন তত বেশী আমার পোষাবে। আমার পোষানোতে আপনার কি আসে যায়। আপনি যে আমারে খয়রাতী দিবেননা সেইটা আমি জানি।ব্যবসায়ীঃ ঠিক আছে, যদি ৫/৬ মাস লাস্টিং করে তাইলে প্রতি সেট ৪০০ টাকা করে দিমুনে। প্রোডাকশন সব আমাকে দিয়ে দিবেন।আমিঃ কি বললেন ? ? ?…………………… মার্কেটে এই মালের হোলসেল প্রাইস সবচেয়ে কমদামিটা ৮৫০ টাকা! যেটা রিটেলে ১০০০/ ১১০০ টাকা করে বিক্রি হয় আর আমাকে এত কম দাম দিবেন অফার করতেছেন?ব্যবসায়ীঃ আরে জাহান্নামে ফালান মার্কেটের রেট। এই দেখেন ইন্ডিয়া থেকে আমি কত দামে মাল আনতাছি ( বলে একটা ফাইল বের করে রেট দেখালো – ৬৮০ টাকা)।আমিঃ এইটাতো তাদের এফওবি রেট। মালের কেরিং কস্ট্‌, ট্যাক্স ডিউটি এগুলো যোগ করলে তো এমনিতে ৮৫০ টাকা দাম হয়ে যায়। তাইলেতো হোলসেল রেট আরো বেশী হওয়ায় কথা। ও আচ্ছা, আপনারাতো ডিউটি ছাড়া এক বিশেষ কুদরতি পদ্ধতিতে মাল আনেন জানি। তো এখন এক কাজ করেন, আপনি ইন্ডিয়ার মালের এফওবি রেটের চেয়েও ২৫% কম দেন, তাইলেও আমার চলবে।ব্যবসায়ীঃ না ভাই, আমার পোষাবে না। আচ্ছা যান আরো ২০ টাকা করে বাড়াইয়া দিমুনে (এমনভাবে বললেন যেনো খয়রাত দিচ্ছেন)।আমিঃ দেখেন ইন্ডিয়ায় র’মেটেরিয়াল, নিজেদের। তাদের র’মেটেরিয়ালের চেয়ে আমার র’মেটেরিয়াল কস্টিং বেশী। সেইম কোয়ালিটি চান অথচ দাম দিতে চান তাদের চেয়ে অর্ধেক। এইটা কেমন ন্যায্যতা? তাইলে আমি কোয়ালিটি ডাউন করে দেই, দাম যা বলছেন তার চেয়েও কম দিয়েন।ব্যবসায়ীঃ আরে ফালায়ে থোন মিয়া ন্যায্যতা। ইন্ডিয়ার চেয়ে অর্ধেক দামে দিতে না পারলে ফ্যাক্টরী দিতে গেছেন ক্যান? আপনে কি ব্যবসা এতো সোজা মনে করছেন?
এবার দেখা যাক এই ব্যবসার কম্পিটেটিভ এডভান্টেজের মামলা:

এই কুৎসিত ব্যবসায়ীটির আলাপটি খেয়াল করুন। তিনি কী চাইছেন? সহজ কথায় ‘অবিশ্বাস্য কম দাম’।এর বিপরীতে উদ্যোক্তার যুক্তিগুলো কী কী সেটাও খেয়াল করুন।কিন্তু ব্যবসায়ীটি বলছেন, ( আলাপের শুরুতেই) “ইন্ডিয়ার অমুক ব্র্যান্ডের মাল ৮ মাস লাস্টিং করে, চায়নার অমুক ব্র্যান্ডের মাল ৬ মাস লাস্টিং করে। আপনারটা যদি ৫ মাস ও লাস্টিং করে তাইলেও চলবে…যদি ৫/৬ মাস লাস্টিং করে তাইলে প্রতি সেট ৪০০ টাকা করে দিমুনে। প্রোডাকশন সব আমাকে দিয়ে দিবেন।”তাহলে এখানে আপনার সুযোগটি কোথায়? ঐ যে, ব্যবসায়ী এখানে মান নিয়ে চিন্তিত নন। ইন্ডিয়ার ‘মাল’ যদি ৬ মাস লাস্টিং করে, তাহলে এই উদ্যোক্তারটা ‘৫ মাস লাস্টিং’ করলেই তিনি খুশি। সেক্ষেত্রে দাম ইন্ডিয়ারটার তুলনায় অনেক কম করে দিতে হবে এবং বিনিময়ে তিনি পুরো প্রোডাকশন কিনে নেয়ার অফার দিচ্ছেন-ব্যবসার দিক থেকে একটি বড় সুযোগ।
এখন উদ্যোক্তা কী করতে পারেন?-

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে বাজারে সুযোগ তৈরি হচ্ছে ‘কমদামে এবং তুলনামূলক কম মানসম্পন্ন’ প্রোডাক্টের বড় ক্রেতা আছে। বিনিময়ে সব পন্য বিক্রির নিশ্চয়তা আছে।এখন উদ্যোক্তা যদি এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন যেখানে তিনি পন্যের মান কমিয়ে দাম কমিয়ে এই নিশ্চিত ক্রেতার সঙ্গে ডিল করতে পারেন, তাহলে তিনি একটি ব্যবসা পেলেন।এটাই হচ্ছে কম্পিটেটিভ এডভান্টেজ চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী কাজ করা।এখন এমনও হতে পারে যে এই রেটে উদ্যোক্তার আসলে মান নামানোর পরেও পোষাবে না। সেক্ষেত্রে ব্র্যান্ডিং করে, নিজস্ব চ্যানেল তৈরি করে কম্পিটেটিভ এডভান্টেজ তৈরি করতে হবে। অন্য অনেকগুলো বিকল্প নিয়ে কাজ করতে হবে এবং সবচাইতে যুক্তিসঙ্গতটিকেই বেছে নিতে হবে।উদ্যোক্তা একটু ভালো দামের জন্য এই ব্যবসায়ীর প্রতিযোগির কাছে যেতে পারেন, এই ব্যবসায়ী যাদের কাছে পন্য বিক্রি করেন সরাসরি তাদের কাছে যেতে পারেন-এভাবে একেকটা স্টেপ কমিয়ে তিনি চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু যেভাবেই হোক, একটি কম্পিটেটিভ এডভান্টেজ অফার না করলে তাঁর পক্ষে ব্যবসা চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হবে-একথা নিঃসন্দেহে বলে দেয়া যায়।
লেখা : আরিফ জেবতিক
প্রকাশ : চাকরি খুঁজবো না চাকরি দেব গ্রুপ।



বিক্রিই ম্যাটার করে, আর কিছু না

‘চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব’ গ্রুপে আমার প্রথমদিকের একটি অভিজ্ঞতাটা খুব মজার। একটা জরুরি কাজে আমার বাল্ক এসএমএস কেনার দরকার ছিল, আমি গ্রুপে পোস্ট দিলাম। অনেক কমেন্ট পেলাম, যার বেশির ভাগেরই কথা হচ্ছে ‘এটি আমি দিতে পারব, আপনার প্রয়োজনটি ইনবক্সে জানান’। একজনই ব্যতিক্রম, তিনি কমেন্টের ঝামেলায় গেলেন না, সরাসরি আমাকে মেসেজ করলেন, ‘ভাই, আমার নাম অমুক, আমি আপনাকে এই সার্ভিসটি দিতে পারব। এই এই রেট পড়বে’-একই সঙ্গে তিনি ইনবক্সে আমাকে তাঁর ভার্চুয়াল ব্রোশিওরটিও মেইল করে দিলেন।
বলা বাহুল্য আমি চটপট উনার সঙ্গে চ্যাটবক্সে বাকি আলাপ সেরে নিলাম, ১০ মিনিটের মধ্যে অর্ডার প্লেস হয়ে গেল, ডিল ফাইনাল। অন্যদিকে তখন বাকিরা মূল পোস্টের কমেন্টে ‘আমারে ইনবক্স করুন’ বলে কমেন্ট করেই যাচ্ছেন!
হ্যা, এই জায়গাটাতেই আমি কথা বলতে চাচ্ছি।
আমাদের দেশের বেশির ভাগ নতুন উদ্যোক্তাদের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে নিজেদেরকে সেল ড্রিভেন কোম্পানি (আমি বিক্রি পাগলা কোম্পানি কথাটি বলতে পছন্দ করি) হিসেবে তৈরি না করা। এখানেই ব্যবসা মার খায়, অথবা ঢিমে তালে চলতে থাকে, অথবা আপাত ভালো চললেও আসলে হয়তো মূল সম্ভাবনার সিকি অংশও হয় না।
বিক্রিই ম্যাটার করে, আর কিছু না:
একজন উদ্যোক্তার প্রধান কাজ হচ্ছে ক্রমাগত বাজার খুঁজে যাওয়া। যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই – না উড়ালে ব্যবসা মিলবে না। বিক্রি প্রচেষ্টার দিক থেকে উদ্যোগ ৩ ধরনের।
১. নতুন প্রোডাক্টের জন্য নতুন ক্রেতা খোঁজা।
২.পুরনো প্রোডাক্টের জন্য নতুন ক্রেতা খোঁজা।
৩.পুরোনো ক্রেতাকে নতুন নতুন প্রোডাক্ট বিক্রি করা।
আমার পছন্দ তৃতীয়টি।
এখানে এই বাল্ক এসএমএস এর উদাহরন দিয়েই আগাই। ধরা যাক, যিনি আমার কাছে বাল্ক এসএমএস বিক্রি করেছেন, তিনি ভালোই বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু সম্ভাবনা এখানেই শেষ ছিল না।

তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারতেন যে আমি কী কাজে এই এসএমএস ব্যবহার করব।
আমি ব্যবহার করছিলাম রোটারি ক্লাবের দেশব্যাপী একটি নির্বাচনের কাজে, প্রার্থীর পক্ষ থেকে নিয়মিত সবাইকে যুক্ত রাখার ও ভিজিবিলিটি বজায় রাখার জন্য।
তাহলে এখান থেকে তিনি দুইটি বুদ্ধি পেতে পারেন।
প্রথমটি হচ্ছে দেশে রোটারি ক্লাব কয়টি? উত্তর: আড়াইশ!
তাহলে এই আড়াইশ ক্লাবের সবারই এমন সার্ভিস লাগতে পারে হয়তোবা। এদের সঙ্গে যোগাযোগ করার উপায় কী? গুগল করলে পাবেন।
আড়াইশ ক্লাবে যোগাযোগ করুন, যদি ১০%কেও প্রোডাক্ট দিতে পারেন, তাহলে
সম্ভাবনা হচ্ছে আপনি আরো ২৫টি জায়গায় এটি বিক্রি করতে পারলেন।
তারপর আসুন, ‘নির্বাচন’ নিয়ে ভাবা যাক।
রোটারি ক্লাবের নির্বাচনে এসএমএস ব্যবহৃত হতে পারলে লায়ন্স ক্লাবের নির্বাচনে কেন নয়?
বিজিএমইএ, বিকেএমইএতে কেন নয়?
কেন নয় বাংলাদেশের প্রতিটি মেডিকেল এসোসিয়েশনের নির্বাচনে, ৬৪টি জেলায়?
রিহাবের নির্বাচনে, দেশের সব আইনজীবি সমিতির নির্বাচনই বা বাদ যাবে কেন?
দেশের সবগুলো মার্কেট সমিতি, অন্যান্য ক্লাব-এসোসিয়েশনে খোঁজ নিয়ে অফার করতেই বা বাঁধা দিচ্ছে কে?
তাহলে কি দেখলেন যে একটি বিক্রি কীভাবে অযুত সম্ভাবনা তৈরি করে দিচ্ছে!
ভাবছেন, বেশ তো ব্যবসা করা গেল।
উহু, এখানেই শেষ নয়।
এখন এদের কাছে নতুন প্রোডাক্ট বিক্রি করুন।
নির্বাচনের জন্য টিশার্ট দিন। নিদেন পক্ষে নির্বাচনী ওয়েবসাইট কিংবা তাঁদের সমিতি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট তৈরির চেষ্টা করেই দেখুন না।
তাঁদের কী সফটওয়্যার লাগে না ব্যবসা চালাতে? দুয়েকটি বানিয়ে দিতে পারবেন না?
জ্বি, এভাবেই ব্যবসার যোগাযোগ তৈরি হলেই সেখান থেকে নতুন নতুন ব্যবসা আনার দিকে মনোযোগ দিন।
আমার মতে উদ্যোক্তাদের প্রধান কাজগুলোর প্রথম ৫টি মনে রাখা সব উদ্যোক্তার জন্য জরুরি।
কাজগুলো হচ্ছে-বিক্রি, বিক্রি, বিক্রি, বিক্রি, বিক্রি।

Disclaimer

Disclaimer: All the information on this website is published in good faith and for general information purpose only. Some content i...