Pages

Thursday, June 7, 2018

ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ (পর্ব ৭ - ১২ )

ডেলিভারি হ্যাপিনেজ- : যত ধান্ধা তত টাকা

স্কুলে আমার একটা ধান্ধা ছিল কেমন করে বেশি টাকা কামানো যায়। লুকাস ফিল্ম আমাকে নিয়োগ দিল ভিডিও গেমস টেস্টার হিসাবে। আমি ঘন্টায় ডলার পেতাম ইন্ডিয়ানা জোনস এন্ড দ্যা লাস্ট ক্রুসেড গেম খেলার জন্য। এটি খুবই মজার কাজ কিন্তু দিন শেষে ঘন্টায় মাত্র ডলার।কাজে যখনই আরো বেশি দামের কাজ পেলাম আমি এটা ছেড়ে দিলাম
হাইস্কুলের ওপরের ক্লাসে আমি কম্পিউটার প্রোগ্রামারের একটি চাকরি জোগাড় করে ফেললাম। কাজটা ছিল জিডিআই নামে একটা প্রতিষ্ঠানে। ওরা দিত ঘন্টায় ১৫ ডলার। এটা নি:সন্দেহে একটা স্কুল ছাত্রের জন্য অনেক টাকা 
কাজটা ছিল এমন সফটওয়্যার বানানো যা কিনা সরকারী বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশনের সুযোগ দেবে। বিশেষ করে কিছু ফরম আছে যা অটোমেটিক্যালি পূরণ করবে ডেটাবেস থেকে। [আমার নিজের অভিজ্ঞতার প্রথম কাজটি আমি করেছিলাম বুয়েটের আইআইসিটিতে থাকতে। সেখানে হজ্জ্ব সিস্টেমের অটোমেশনে কাজের একটা ছিল ভিসার জন্য অনলাইন ফর্ম পূরণ করা। যে তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করা হবে সেগুলো এর মধ্যে আমরা একটা ডেটাবেসে রেখেছি। কিন্তু কাজ ছিল প্রতি ফরম পূরণ করার পর তারা একটি ট্রেকিং নাম্বার দিত। ট্রেকিং নাম্বারটা গুরুত্বপর্ণ। কাজে রাসেল আমাদের একটা এরকম প্রোগ্রাম লিখে দিল যা ডেটাবেস থেকে প্রত্যেকটা ফিল্ডে ডেটা এন্ট্রি দিয়ে দিত, তারপর ওয়েব ফরম সাবমিটের পর পাওয়া ট্রেকিং নম্বরটা ডেটাবেসে রেখে দিত। আমি ২০০২ সালের কথা বলছি]
আমার বস ছিলেন ফরাসী, রূপালী চুলের বয়স্ক লোক। আনন্দের জন্য আমি মাঝেমধ্যেই তার সঙ্গে মজা করতাম। বসের পছন্দ ছিল চা খাওয়া। অফিসের মাইক্রোওয়েভ ওভেনটা আছে আমার টেবিলের পাশে। তিনি প্রায় সময় এক কাপ পানি ওভেনে রেখে তারপর আবার নিজের ডেস্কে চরে যান। পানি গরম হতে তিন মিনিট লাগে। তারপর এসে তিনি চা বানাতেন
তা একদিন তিনি পানি রেখে তিন মিনিটের জন্য ওভেন সেট করে নিজের জাযগায় চলে গেলেন। উনি যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি ওভেন বন্ধ করে দিলাম। একটু পরে তিনি এসে দেখলেন পানি গরম হয়নি। ভাবলেন নিজের ভুল তাই আবার দিয়ে গেলেন। আমি আবার বন্ধ করলাম
এবার তিনি ভাবলেন ওভেনটার কিছু একটা হয়েছে। এবার সেটা মিনিটের জন্য সেট করলেন
পাঁচ মিনিট পর এসে তিনি ওভেনের ঢাকনা খুলে অবাক হয়ে চিৎকার করে উঠলেনআরে এটা কী?
তারপর তিনি হাসতে শুরু করেন এবং চারিদিকে তাকিয়ে দেখলেন সবাই নিজ নিজ আসন ছেড়ে উঠে দাড়িযেছে কারণ সবাই এই কৌতুকের অংশ
তখন তিনি সবাইকে চায়ের কাপটা দেখালেন। ওটার মধ্যে সব বরফের টুকরা যা আমি একটু আগে রেখে দিয়েছি। ততক্ষণে সবাই জোর গলায় হাসিতে ফেটে পড়েছে। কেও কেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমসিম খাচ্ছেন
আমি জানি অনেকদিন আমরা এভাবে হাসিনি
হাসতে হাসতে আমি জেনে গেলাম সামান্য একটু মজা পুরো অফিসের চেহারা পাল্টে দিতে পারে এবং সবাইকে পরস্পরের কাছে নিযে আসতে পারে
আমি খুবই খুশি যে ঐদিন আমার চাকরিটা চলে যায়নি!!!


ডেলিভারি হ্যাপিনেজ- : শেখার আছে অনেক কিছু

স্কুলে থাকতে থাকতে আমি জিডিআই থেকে ভালো আয় রোজগার করেছি। কিন্তু আমি সবসময় আমার বোতাম ব্যবসার কথা ভাবতাম। আমার মনে আছে আমি কত উত্তেজনা নিয়ে ডাক হরকরার জন্য অপেক্ষা করতাম। আমি ভাবলাম, যে কোম্পানি থেকে আমি বোতাম তৈরির মেশিনটা কিনেছি তারা নিজেরাও এই ব্যবসা করতো। কারণ আমি তো বয়ে লাইভম্যাগাজিন থেকে তাদের এড পেয়েছি
কাজে আমি ভাবলাম আমিও সেখানে কিছু  বিক্রি করার চেষ্টা করি। অবসর সময়ে আমি কিছু ম্যাজিকের বই পড়েছি। সেখান থেকে ভাবলাম আমি ম্যাজিকের ট্রিক বিক্রি করতে পারি। যেমন মুদ্রা ভ্যানিশ করে দেওয়া। আমি যাদেরকে এই যাদু দেখেয়েছি তারা সবাই এটি দেখে অবাক হয়েছে এবং পরে আমার কাছে জানতে চেয়েছে কীভাবে করলাম!
কয়েন, কাপ রাবার ছাড়া এই কাজের জন্য দরকার লেটেক স্কোয়ার যা দাঁতের ডাক্তারদের কাছে ডেন্টাল ডাম নামে পরিচিত
কিছু রিসার্চ করে আমি দেখলাম বেশি করে কিনলে ২০ সেন্টের মধ্যে এক খন্ড কেনা যাবে। বয়ে লাইফে একটা ক্লাসিফায়েড বিজ্ঞাপনের জন্য খরচ হবে ৮০০ ডলার। কাজে আমি যদি আমার ম্যাজিক ট্রিকের প্রতিটার জন্য ১০ ডলার নেই তাহলে ৮০টা হলেই আমার ব্রেক-ইভেন হয়ে যাবে। তাছাড়া এটি বোতামের চেয়ে কুল। বোতামে আমি মাসে ২০০টা অর্ডার পেতাম। এখানেও যদি তাই পাই তাহরে আমার লাভ হবে মাত্র এক হাজার ১৬০ ডলার। আর ৩০০ হলে?
২১৪০!!!
যদি ৮০০ ডলার বিজ্ঞাপনে খরচ করাটা আমার দুই সপ্তাহের মজুরী তারপরও আমি এটাকে বিনিয়োগ হিসাবে নিলাম। টাকা পাঠাোনর কয়েক মাস পর আমার বিজ্ঞাপন ছাপা হল। এবং কী আশ্চর্য পরের সপ্তাহেই আমি প্রথম অর্ডারটা পেলাম
এর পর থেকে আমি অধীর আগ্রহে অর্ডারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম
কিন্তু ঐদিন আর আসলো না! মাত্র একটি অর্ডারই আমি পেয়েছি
বোতামের অভিজ্ঞতা থেকে আমি নিজেকে এই লাইনের একজন পণ্ডিত ভেবেছি। কিং অব মেইল অর্ডার বিজনেজ। কিন্তু এই চপেটাঘাত আমার জন্য মনে হয় দরকার ছিল
দিন আগে আমি গ্রীক হাবরিস পড়েছি। এর মানে হল আত্মগরিমার পরাকাষ্ঠা
এবং আমি বুঝলাম আসলে একটা কাজে ঝাপিয়ে পড়ার আগে এর অন্ধিসন্ধি ভালমতো বুঝতে হয়। আর কোন ফার্মকে হারিয়ে দেওয়াটা মোটেই সহজ নয়

৮০০ ডলার আসলে ২৪টি কেঁচো খামারের সমতুল্য


ডেলিভারি হ্যাপিনেজ : কত রবি জ্বলেরে? কেবা আখি মেলে রে?

হাইস্কুল শেষে আমি কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য ব্রাউন, ইউসি বার্কলে, স্ট্যানফোর্ড, এমআইটি, প্রিন্সটন, কর্নেল, ইয়েল এবং হার্বার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করি। এবং সবগুলোই ভর্তির সুযোগ পাই। এর মধ্যে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে একমাত্র বিজ্ঞাপনে মেজর করার সুযোগ আছে। আমার মনে হয়েছে বিজ্ঞাপনই মনে হয় ব্যবসার সরাসরি কাছের কোন ব্যাপার। কাজে ব্রাউনই ছিল আমার প্রথম পছন্দ
কিন্তু আমার বাবা-মার অবশ্য  পছন্দ হার্বার্ড। বেশিরভাগ এশিয়ানরই তাই। কাজে আমাকেও সেখানে যেতে হল
হার্বার্ডের ডরমিটরিতে গিয়ে আমার প্রথম কাজ ছিল একটা টেলিভিশন কেনা। বাসায় থাকতে আমি সপ্তাহে মাত্র ঘন্টা টিভি দেখার সুযোগ পেতাম। কাজে, হলে এসে দৈনিক চারঘন্টা টিভি দেখার একটা সিডিউল বানিয়ে ফেললাম!
এমনভাবে ক্লাস বাছাই করি যাতে সোম, বুধ আর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত ক্লাস থাকে আর মঙ্গল আর বৃহস্পতিবার ফাঁকা। ক্লাসের দিনগুলোতে ভোর আটটার সময় যখন এলার্ম বেজে উঠতো তখনই আমার মেজাজ যেত খারাপ হয়ে। কাজে বারবার স্নুজ বাটনটা টিপে টিপে ভাবতাম প্রথম ক্লাসটা না করলেও মনে হয় হবে। পরে কারো কাজ থেকে নোট যোগাড় করে নেওয়া যাবে। পরের ঘন্টায় আমি নিজেকে এভাবে কনভিন্স করতাম- প্রথম ঘন্টার ক্লাসনোট যদি কারো কাজ থেকে পাওয়া যায় তাহলে দ্বিতীয়টারটাও পাওয়া যাবে!
এমন করতে করতে তৃতীয় ক্লাসের সময় হয়ে যেত। তো এরই মধ্যে দুইটি ক্লাস মিস করেছি। আর একটাতে কি আসে যায়। আর শেষ ক্লাসের সময় তো এটা বলা যায়, “তিনটাই যেখানে করি নাই। সেখানে আর একটার জন্য ক্যাম্পাসে গিয়ে কী লাভ?”
শেষ পর্যন্ত ফ্রেশম্যান ইয়ারে বলতে গেলে তেমন কোন ক্লাশই আমার করা হয়নি। আর আলস্যের কারণে যেহেতু ক্লাশে যেতে পারতাম না, একই কারণে গোছল করা হতো না। খাওয়ার জন্যও ক্যাম্পাসে যাওয়াটা কঠিন ছিল।  আমার সময় কাটতো ডে অব আওয়ার লাইভ থেকে আর জাপানী রামেন খেয়ে। (এবার জাপান গিয়ে রামেন দেখেছি। হলো সবজি দিয়ে কুইক নুডলস)
কাজে ফ্রেশম্যান ইয়ারে আমার সময় কেটেছে আড্ডা দিয়ে, টিভি দেখে আর ঘুরে বেড়িয়ে। তবে, স্কুলের মত এখানেও একটা ভাল গ্রেড পাবার বুদ্ধি সবসময় আমি বের করে ফেলতাম। আমার তিনটি কোর্স ছিল আমিরিকান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ, ভাষাতত্ত্ব আর ম্যান্ডারিন চাইনীজ (এটিতো আমার বাবা-মায়ের ভাষা!)  কিন্তু কোর রিকোয়ারমেন্ট সম্পূর্ণ করার জন্য আমাকে একটা বাইবেলের কোর্সও নিতে হয়েছে। ভাল খবর হল এই ক্লাসের কোন হোমওয়ার্ক বা এসাইমেন্ট ছিল না। কাজে আমি কখনো ক্লাসে যায়নি। দু:খের ব্যাপার হলএই কথার অর্থ হল গ্রেড হবে খালি ফাইনাল পরীক্ষার ভিত্তিতে
পরীক্ষার দুই সপ্তাহ আগে প্রফেসর মশাই আমাদেরকে একটা ১০০ টপিকের তালিকা ধরিয়ে দিয়ে বললেন পরীক্ষায় এর মধ্য থেকে ৫টি বিষয়ে কয়েক প্যারাগ্রাফ করে লিখতে হবে। আর পাঁচটা বিষয় নির্ধারণ হবে দৈবচয়নের ভিত্তিতে।
মাত্র দুই সপ্তাহে এত বিষয় পড়ে ফেলা সম্ভব নয়। কী করবে বুঝে উঠতে পারলাম না। তবে, প্রয়োজনই যত উদ্ভাবনের গোড়া। কাজে একটা বুদ্ধি আমি বের করে ফেললাম
হাইস্কুলে আমার শখবিবিএস বা বুলেটিন বোর্ড সার্ভিসে ঘুরে বেড়ানোর কথা তো তোমরা জানো। কলেজে সেটা হল নিউজগ্রুপ
আমি করলাম কি, এরকম একটা নিউজগ্রুপে একটি ছোট্ট আহবান জানাই যারা  এই কোর্সটা নিয়েছে তাদের একটি স্টাডি গ্রুপে যোগ দেওয়ার জন্য। গ্রুপটা হবে সবচেয়ে বড় স্টাডি গ্রুপ কারণ এটি হবেভার্চুয়াল সেটাই আমি জোর দিয়ে বললাম
যারা যোগ দিয়েছে তাদেরকে তিনটা করে টপিক দেওয়া হল রিসার্চ করার জন্য। কাজ হবে প্রত্যেকে তিনটা টপিকের ওপর ফাইনাল প্যারাটা লিখে আমাকে -মেইল করবে  -মেইল থেকে সেগুলো নিয়ে প্রথমে প্রিন্ট আর পরে ফটোকপি করলার কাজটা আমার। তারপর সবগুলো যোগাড় হওয়ার পর একত্র করে করে একটা নোটখাতা বানালাস। কোন কোন টপিকের একাধিক ভার্সনও পাওয়া গেল
তারপর ফটোকপি বাইন্ডিং খাতার কপি মাত্র ২০ ডলারে বিক্রি করতে শুরু করলাম। তবে, একটা শর্ত রাখলাম। যারা তিনটি টপিক নিয়ে রিসার্চ করেছে কেবল তারাই এটি কেনার যোগ্যতা রাখে
আর এভাবে কোন বই না পড়ে আর এমনকী কোন লেখা নিজে না লিখে আমি ইতিহাসের সবচেয়ে সমৃদ্ধ স্টাডিগাইডটি তৈরি করে ফেলি যা কীনা অনেকেই পছন্দ করেছে। উপরন্তু আমি কিছু টাকাও কামিয়ে ফেললাম।
ব্যাপারটা এত ভাল ছিল যে, হার্বাডের ক্যাম্পাস ম্যাগাজিন ক্রিমসনে এই নিয়ে একটা ফিচারও ছাপা হয়
আর এভাবে আমি আবিস্কার করি ক্রাউডসোর্সিং এর ক্ষমতা

ডেলিভারি হ্যাপিনেজ ১০ : কলেজে নিজের ব্যবসা

কলেজে আমি নানান কিছু জানতে, শিখতে এবং করতে শিখলাম
কলেজে একটা ফিল্ম সোসাইটি ছিল। তারা স্কুল অডিটরিয়ামে সিনেমা দেখাতো দর্শনীর বিনিময়ে। আয়-বরকত ভালই। আমার এক বন্ধুর ছিল গো-খামার। একদিন সেখানে গিয়ে কাটালাম। দেখলাম কীভাবে গাভীকে দোহন করে দুধ পাওয়া যায়! একদিন আইস স্কেটিং করতে গিয়ে পড়ে গেলাম। আমার চিবুক গেল কেটে, রাতের বেলায় করতে হল সেলাই-ফোড়াই!
স্থানীয় একটি রেডিওর দেওয়া টিকেট পেয়ে প্রথম কনসার্ট দেখেছি। ইউটু-এর জু টিভি ট্যুরের সময়। হার্বার্ড বার্টেন্ডিং কোর্স করে একটা সার্টিফিকেট পেয়ে বিয়ে বাড়িতে খাবার পরিবেশন করেছি! কম্পি্টুার প্রোগ্রামিঙ-এর চাকরি তো ছিল। এগুলি করেছি হার্বার্ড স্টুডেন্ট এজেন্সিজ, স্পিনাকার সফটওয়্যারে। বাড়তি ছিল মাইক্রোসফটে ইন্টার্নশীপ!
বিবিএন নামে একটা কোম্পানিতেও আমার কাজের অভিজ্ঞতা আছে। বিবিএন হল সে কোম্পানি যারা ইন্টারনেট মেরুদন্ডের প্রযুক্তি তৈরি করেছে! বিবিএন বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। বিবিএনে কাজ করার সময় আমার সিক্রেট স্ট্যাটাস নিয়ে কাজ করতে হত। কখনো কখনো স্ট্যটাসটাই ক্লাসিফায়েড ছিল!
এক সামারে আমি ঠিক করলাম কেমব্রিজ থেকে বোস্টনে যাবো সাঁতার কেটে। করলামও তাই। এই  সময় আমি অতিক্রম করলাম গার্ডিয়ান এনজেলস নামে একটি সংস্থার সদর দপ্তর। ওরা অপরাধ দমনে আর নিয়ন্ত্রণে কাজ করে, পুলিশের সঙ্গে আমি কয়েক মাসের জন্য সেটার সদস্য হয়ে রাস্তায় পেট্রল দিয়ে বেড়ালাম! আমার গ্যাং নাম হল – সিক্রেট আমি ভেবেছি, সরকারের সঙ্গে সিক্রেট কাজ-কারবারের কথা বলেছি বলে আমার এই নাম হয়েছে। পরে শুনেছি অন্যরা নাকি আমার নাম দিতে চেয়েছিল – এনসিয়েন্ট চাইনীজ সিক্রেট!
কলেজের জুনিয়র আর সিনিয়র ইয়ারে এসে আমার মনে পড়ল- আরে আমি তো নিজের কোন ব্যবসা চালাচ্ছি না!
কাজে আমি কুইনসি হাউস গ্রিল চালানোর দায়িত্ব নিলাম। কুইনসি হাউস ডরমিটরিতে প্রায় তিনেক শিক্ষার্থী। বেসমেন্টের গ্রিলে রাতের বেলায় জড়ো হয়ে সবাই হয় ফুটবল, না হয় পিনবল কিংবা আড্ডাবাজি করে। আর খাওয়া দাওয়া করে।বুয়েটের আহসানউল্লা হলের কেন্টিন আর কি! ) আমার সঙ্গে আমার রুমমেট সঞ্জয়ও যোগ দিল। আমাদের কাজ ছিল প্রতিদিনের মেনু আর দাম ঠিক করা, কোনোখান থেকে সেগুলো যোগাড় করে এনে গ্রিলে সরবরাহ করা, এই কাজের জন্য কয়েকজনকে কাজ দেওয়া আর মাঝে মধ্যে নিজেরা কিছু খাবার তৈরি করা
সে সময় ক্যাম্পাসের আশে পাশে ফার্স্টফুডের দোকান দেওয়া যেত না। কাজে আমি সাবওয়ে ধরে পরের স্টেশনের ম্যাকডোনাল্ড থেকে হ্যামবার্গারের পেটিট আর বন নিয়ে আসতাম। পরে সেগুলো আমরা বিক্রি করতাম। ক্যাম্পাসের আর কোথাও কিন্তু ম্যাকডোনাল্ড বার্গার পাওয়া যেত না। কাজে আমি টাকা খরচের বার্গারের দাম রাখতাম টাকা!
তবে কিছুদিন পর আমি হয়রান হয়ে গেলাম। আচ্ছা আরো বেশি মুনাফার কিছু নাই!
আমি শুনেছি টাকা খরচের পিৎজা ১০ টাকায় বেঁচা যায়। এমনকি আরো বেশি দামেও যায়। তবে, একটি পিৎজা ওভেনের দাম মাত্র ২০০০ টাকা। আমি একটা বড় শ্বাস নিয়ে একটা ২০০০ টাকার চেক কাটলাম
আমি আমাদের গ্রিলকে আরো আকর্ষনীয় হ্যাং-আউট প্লেস বানাতে চাইলাম। সেজন্য রাতের পর রাত আমি মিউজিক ভিডিও টেলিভিশন থেকে ভিডিও রেকর্ডারে রেকর্ড করতে থাকি এবং বিজ্ঞাপন বাদ দেই। সবমিলিয়ে এটা হয়ে গেল গ্রেট হিট। সারাক্ষণই ব্যাকগ্রাউন্ডে মিউজিক চলতো। কোন বিজ্ঞাপন নাই। কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের বিক্রি বেড়ে গেল তিনগুন। ওভেনও দামও ওঠে গেল সহসা
এই পিজার ব্যবসা করতে গিয়ে আমার পরিচয় হল আলফ্রেডের সঙ্গে। আলফ্রেড পরে জাপ্পোসে যোগ দেয় সিএফও এবং সিওও হিসাবে। আলফ্রেডের সঙ্গে সখ্যতার গল্প পরের পর্বে


ডেলিভারি হ্যাপিনেজ  ১১ : আমার বন্ধু আলফ্রেড

আলফ্রেড আসলে আমাদের পিৎজার এক নম্বর কাস্টোমার। প্রতিরাতেই সে একটা লার্জ পিৎজা অর্ডার করতো
কলেজে আলফ্রেডের দুইটা নিকনেম ছিল- হিউম্যান ট্র্যাশ কমপ্যাক্টর এবং মনস্টার। প্রতিবার আমরা ১০ ১২ জন মিলে চাইনীজ কং রেস্তোরায় খেতে গেলে আলফ্রেডের মহিমা বোঝা যেত। আমরা যা খেতে পারতাম না, প্লেটে রেখে দিলাম, আলফ্রেড একাই সব খেয়ে ফেলতো! আমি খুবই সোভাগ্যবান যে, আলফ্রেড আমার রুমমেট নয় ফলে ওর সঙ্গে আমাকে টয়লেট শেয়ার করতে হয় না!
এই কারণে আলফ্রেড যখন প্রতিদিন রাতে আস্ত একটা পেপোরনি পিৎজা অর্ডার করতো আমি অবাক হতাম। কিন্তু কোন কোন দিন কয়েকঘন্টা পরই আবার একটা আস্ত পিৎজা নিয়ে যেত। আমার মনে আছে আমি ভাবতাম- ছেলেটা খেতে পারে বটে!
অনেক বছর পরে আমি আবিস্কার করলাম আলফ্রেড আসলে এা পিৎজা খেত না। সেটা সে রুমে নিয়ে গিয়ে, স্লাইস করে রুমমেটদের কাছে বিক্র করতো! এই কারণেই আলফ্রেড শেষতক আমার সিএফও পরে সিওও হয়েছিল
কয়েক বছর আগে আমরা একটা হিসাব করলাম। ফলাফল?
পিৎজা বিক্রি করে আমি কলেজে মোটের ওপর অনেক টাকা কামাইছি। কিন্তু ঘন্টা হিসাবে হিসাব করলে আলফ্রেডের আয় ছিল আমার চেয়ে ১০গুণ!
বছর শেষে আমার আয় হল ঘন্টায় মাত্র দুইটাকা!
পরেরে পর্ব : কলেজের শেষ দিনগুলো


ডেলিভারি হ্যাপিনেজ ১২ : কলেজের শেষ দিনগুলি


আমার সিনিংর ইয়ারে রুমমেট সঞ্চয় আমাকে একটা নতুন জিনিষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়- ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব(www) আমি একবার ভাবলাম এটিকে নানান দিক থেকে এক্সপ্লোর করাটা নিশ্চয় অনেক মজার হবে। কিন্তু আমি এই কাজে বেশি মনোযোগ দিলাম না!
অন্য সকল সিনিয়রের মতো আমারও লক্ষ্য ছিল গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার আগে একটা চাকরি যোগাড় করা। দেশের প্রায় সব জায়গা থেকে এবং সব শিল্প থেকে কোম্পানির লোকেরা হার্বার্ডে এসে পড়েছে। উদ্দেশ্য আমাদের ইন্টারভিউ যাতে আমাদের দৌড়াদৌড়ি করতে না হয়
আমার বেশিরভাগ বন্ধু রুমমেটরা ব্যাংক কিংবা ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্সি ফার্মে আবেদন করেছে। কারণ সেটাইহট জবহিসাবে পরিচিত। আমার কাছে দুটোই বোরিং। আমি আবার শুনেছি যে কখণো কখনো ১৬ ঘন্টাও অফিস করা লাগে
কাজে আমি আর সঞ্জয় টেকনোলজি কোম্পানিগুলোতে ইন্টারভিউ দিতে শুরু করলাম। আমার নিজের লক্ষ্য ছিল সহজ- কম কাজে বেশি টাকা পাওয়া। কোম্পানির নাম ধাম আছে কী না, কোম্পানি ভাল কিনা এসব নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা ছিল না। আমি চেয়েছি কাজ কম করবো কিন্তু টাকা বেশি পাবো। এমন একটা চাকরি বাগাতে
আমার আর সঞ্জয়ের দুইজনেরই চাকরি ওরাকলে আর এভাবে আমরা প্রবেশ করলাম কলেজ থেকে রিয়েল লাইফে!



Post & Article Credit: Munirhasan.com

No comments:

Post a Comment

Disclaimer

Disclaimer: All the information on this website is published in good faith and for general information purpose only. Some content i...