Pages

Thursday, May 2, 2019

পাভরাইয়ের সাফল্যের দশ সূত্র

মহনিশ পাভরাই একজন ইন্ডিয়ান-আমেরিকান ইনভেস্টর। চার্লি মাঙ্গার, ওয়ারেন বাফেটের যোগ্য শিষ্য। বাফেট-মাঙ্গার এবং বেনজামিন গ্রাহামের পথ সরাসরি কপি করে তিনি বিরাট সাফল্য পেতে সক্ষম হয়েছেন আর প্রায়ই তা স্বীকার করেন। নিজের "পাভরাই ফান্ডস"কে বলে থাকেন মূল বাফেট পার্টনারশীপের কপি।

মহনিশের কথায়, “আমি যতটুকু পারা যায় মিস্টার বাফেটের স্ট্র্যাকচার অনুসরন করেছি, কারন আমার কাছে তা যৌক্তিক পদ্বতি মনে হয়েছে।”



ইনভেস্টর পডকাস্টে তার কয়েকটা ইন্টারভিউ আছে। এর একটাতে তিনি বলছিলেন, যে তাঁর বাবা ছিলেন একজন স্ট্রাগলিং বিজনেসম্যান। প্রতিদিন খাবার টেবিলে বসে তিনি আলোচনা করতেন কীভাবে আরেকটা দিন ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া যায়। তাই অল্প বয়েসেই পাবরাই ম্যানেজম্যান্ট সম্পর্কে ভালো জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। তিনি বলেন, ঐ বয়েসেই তাঁর কয়েকটা এমবিএ হয়ে গিয়েছিল।

লেখাপড়া শেষ করে প্রথমে একটি আইটি ফার্ম খুলেন। একবার বিমানে বসে বাফেটের উপরে লেখা একটা বই পড়তে পড়তে তিনি ঠিক করে নেন তার গন্তব্য। ফার্ম বিক্রি করে নামেন ইনভেস্টিং এ।

মহিনিশ পাভরাই যেহেতু ভ্যালু ইনভেস্টর তাই ব্যবসা সম্পর্কে তার ধারণা ভালো। এবং রয়েছে প্রচুর পড়াশোনা এইসব বিষয়ে। ওয়ারেন বাফেটের পার্টনার চার্লি মাঙ্গার ওয়ার্ল্ডলি উইজডম বা দুনিয়াবি প্রজ্ঞা অর্জন করে অপেক্ষাকৃত কম ভুল করে যাওয়ার যে চিন্তা প্রচার করেন, পাবরাই তা সরাসরি মেনে চলার চেষ্টা করেন। এই লেখায় মহনিশ পাবরাইয়ের কাছ থেকে জানা সফলতার দশটি সূত্রের কথা আমরা জানবো। অন্যসব সফলতার সূত্র জাতীয় লেখা থেকে এটি আলাদা কারণ এখানের টিপস বা সূত্রগুলি রাতারাতি সাফল্যের কথা বলে না।

‍‌‌‌‌‍‍#পাভরাইয়ের_সাফল্যের_দশ_সূত্র 

সব সময় ঝুঁকি কমাতে চেষ্টা করুক। লো রিস্ক হাই রিটার্ন খুঁজুন। মাইক্রোসফটে পর্যন্ত রিস্ক ছিল অল্প, বেশী ছিল অনিশ্চয়তা।

ব্যবসা মানেই ঝুঁকি গ্রহণ এমন একটি কথা বা ধারণা প্রচলিত আছে। কিন্তু সরাসরি এ ধরণের ধারণা ভ্রান্ত। কারণ ঝুঁকি গ্রহণের জন্য আপনি ব্যবসায় নামেন নি। আপনি ব্যবসায় নেমেছেন লাভের জন্য বা সমাজকে ভালো কিছু দেয়ার জন্য।

অহেতুক ঝুঁকি গ্রহণ করে খেলা দেখানো, বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে পড়া বা নানা টেকনিক দেখিয়ে বাইক চালানো জাতীয় “রিস্ক সিকিং বিহেভিওর” ব্যবসা নয়, বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষনের পন্থা হতে পারে ইভ্যুলেশনারি সাইকোলজি মতে। ব্যবসায় আপনার সর্বপ্রধান লক্ষ হওয়া উচিত ঝুঁকি কমানো এবং বেশী লাভ অর্জন করা।

মার্কেটে নামার আগে আপনার মার্কেট কেমন বুঝুন। প্রতিটি মার্কেটে দুই তিনজন প্লেয়ার থাকে যারা প্রায় ৯০ ভাগ মার্কেট নিয়ে যায়। আপনাকে তাদের একজন হতে হবে।

মার্কেটে নামার আগে মার্কেট সম্পর্কে বুঝুন। পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করুন, বিশ্লেষণ করুন, এ সংশ্লিষ্ট বই পড়ুন ও জানুন। মার্কেটের চরিত্র বুঝার চেষ্টা করুন। এর জন্য মিখায়েল পর্টারের ফাইভ ফোর্স মডেল আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

মার্কেটে মনোপলি করতে হবে ভালো প্রফিটের জন্য। এবং এই মনোপলির জন্য প্রায় ৯০% আপনার দখলে থাকা চাই। এটা কীভাবে করবেন ভাবুন। এই ব্যাপারে আপনাকে এগ্রেসিভ হতে হবে। বড় মার্কেটে ৯০% না পারলে, ছোট নিশ মার্কেটে যান ও ৯০% দখল করে নিন।

সক্ষমতার বৃত্ত কতো বড় তা ব্যাপার না, ব্যাপার হলো আপনি তার ভেতরে আছেন কি না। সক্ষমতার বৃত্তের ভেতরে থাকাটাই বিষয়।

সক্ষমতার বৃত্ত হলো আপনি কী জানেন বা বুঝেন সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখা। সাইকোলজিক্যালি মানুষ নিজের সক্ষমতার বিচার করার সময় বাড়িয়ে করে, এবং যে যত অক্ষম সে ততো বেশী বাড়িয়ে বিচার করে।

আপনার আইকিউ ১২০ হয় যদি আর আপনি ভাবেন ১০০ তাহলে তা সমস্যা নয়। কিন্তু আপনার আইকিউ যদি ১০০ হয় আর আপনি ভাবেন ২৫০ তাহলে খুবই বড় সমস্যায় পড়তে যাচ্ছেন।

নিজে যা বুঝেন না সেই ব্যবসায় যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। সেইসব ব্যবসা করতে যান যেগুলি আপনার বুঝার সীমার ভেতরে।

এমন কিছু বিক্রি করবেন না যা ক্রেতা হলে আপনি কিনতেন না - 

এটি একটি সত্যি কথা। আপনি যদি এই চেষ্টা করেন তাহলে আপনার পণ্যের গুণগত মান অনেক ভাল হবে। আপনার কাস্টমাররা খুশি থাকবে। নিজেকে কাস্টমারের জায়গায় রেখে ভাবুন।

অপেক্ষা করুন সঠিক সুযোগের জন্য -

অপেক্ষা সব সময় দোষের নয়। বরং অপ্রস্তুত কাজ, এবং কিছু একটা করতে হবে ভেবে কিছু একটা করা খারাপ পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। কখনো কখনো আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে সঠিক সময়ের জন্য। এবং সঠিক সময়টি বুঝার জন্য প্রাজ্ঞতা আপনাকে অর্জন করতে হবে।

কর্তারা কী ভাবছে বুঝার চেষ্টা করুন -

কোন একটা ব্যবসার কর্তা লোকেরা কয়েকটা বিষয় বিবেচনা করে তাদের বিজনেস সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। আপনাকে ঐ ভ্যারিয়েবলগুলি জানতে হবে, এবং ঐ ভ্যারিয়েবলের আলোকে দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন ঐ বিজনেসের ভবিষ্যত কী হতে পারে। একজন ইনভেস্টর হিসেবে এটা আপনাকে সাহায্য করবে।

মার্কেটিং গুরুত্বপূর্ণ -

মার্কেটিং এ লক্ষ দিন। মার্কেটিং ভালো হলে আপনার ব্যবসার সেল ডিপার্টমেন্ট দূর্বল হলেও চলবে। এবং মার্কেটিং বলতে সাধারণ তথাকথিত মার্কেটিং নয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি বিহেভিওরাল ইকোনমিক্স, নাজ ও সাইকোলজিক্যাল মার্কেটিং সম্পর্কে জানা সব উদ্যোক্তার জন্য দরকারী। নিজে জানতে না পারলে এ ব্যাপারে যারা জানে তাদের সাহায্য নেয়া। এবং কখনো সাইকোলজিক্যাল মার্কেটিং এর এবিউজ করে কাস্টমারদের ধোঁকা না দেয়া।

সবসময় শেখার মধ্যে থাকতে হবে -

সব সময় শেখার মধ্যে থাকার কোন বিকল্প নেই। একজন উদ্যোক্তা সমাজ নিয়ে কাজ করছেন। তার ব্যবসা সমাজ ও মানুষের মধ্যে কাজ করে। তাই সমাজ ও মানুষ সম্পর্কে তাকে নিয়মিত জানতে হবে। আপডেটেড তথ্য ও রিসার্চ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। প্রতিদিন সকালে যেরকম জানাশোনা নিয়ে ঘুম থেকে উঠেন, তার চাইতে অল্প একটু বেশী জেনে ঘুমাতে যান। চার্লি মাঙ্গারের এই কথা আমি মেনে চলি। উদ্যোক্তাসহ সবার জন্যই আমি মনে করি, এটা মানা দরকারী।

ফিডব্যাক দরকারী -

ফিডব্যাকে নজর দিন। আপনি কোন আইডিয়া শেয়ার করলে বা মডেল উপস্থাপন করলে মানুষ কী বলে দেখুন। বেশীরভাগ স্টার্ট আপই তারা যা নিয়ে এসেছিল তা থেকে সরে গিয়ে সফল হয়েছে। ফিডব্যাক বা লোকের মতামতে নজর দেয়া তাই খুবই গুরুত্বপূর্ন।

প্রতিযোগীতা থেকে লাভ তুলুন - 

প্রতিযোগীতা এড়িয়ে চলতে না পারলে প্রতিযোগীতার সুফল নিতে চেষ্টা করুন। কারণ মার্কেটে তীব্র প্রতিযোগীতা বিরাজমান।

Bdpreneur.com এর জন্যে এই লেখাটি লিখেছেন : Muradul Islam



No comments:

Post a Comment

Disclaimer

Disclaimer: All the information on this website is published in good faith and for general information purpose only. Some content i...